সাধারণ জ্ঞান

বেগম খালেদা জিয়া বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপার্সন। তার সম্পর্কিত কিছু সাধারণ জ্ঞান নিচে দেওয়া হলো।

খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং দুই মেয়াদে (১৯৯১-৯৬, ২০০১-০৬) এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপার্সন এবং দলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। তার স্বামী জিয়াউর রহমান এর মৃত্যুর পর তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেন। 

Begum Khaleda Zia
বেগম খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়া বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান

  • প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান।
  • রাজনৈতিক জীবন: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তিনি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করেন এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।
  • প্রধানমন্ত্রীত্ব: তিনি ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
  • নির্বাচনী ইতিহাস: ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়লাভ করেন এবং পরে একটি আসন রেখে বাকিগুলো থেকে পদত্যাগ করেন।
  • স্বামী: তার স্বামী ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
  • ফার্স্ট লেডি: জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

প্রাথমিক তথ্য ও রাজনৈতিক জীবন 

  • জন্ম: বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট (যদিও তার জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিভিন্ন নথিতে ভিন্ন ভিন্ন তারিখ পাওয়া যায়)। তার পৈত্রিক নিবাস ফেনী জেলায় হলেও তিনি ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
  • স্বামী: তার স্বামী ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন।
  • রাজনীতিতে প্রবেশ: ১৯৮১ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর, খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন।
  • দলের নেতৃত্ব: ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে তিনি দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং তখন থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। 

অর্জন ও দায়িত্ব

  • প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী: তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)।
  • প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ: তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন:
    • ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত
    • ১৯৯৬ সালের একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য
    • ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত
  • বিরোধীদলীয় নেত্রী: তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
  • স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন: জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরের দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন।

বর্তমান অবস্থা এবং স্বাস্থ্য

২০২০ সালের ২৫ মার্চ মানবিক কারণে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং বাড়িতে গৃহবন্দী অবস্থায় থাকেন, যা একাধিকবার বাড়ানো হয়। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন তার মুক্তির আদেশ দেন। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা থেকে খালাস পান। তিনি ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছেন।

তবে তার স্বাস্থ্য অত্যন্ত নাজুক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যা, যকৃতের সিরোসিস, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। ২০২১ সালে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চিকিত্সার জন্য বিদেশ যান এবং লন্ডন থেকে মে মাসে ফিরে আসেন। সাম্প্রতিকতম খবর অনুসারে, ২০২৫ সালের নভেম্বরের শেষে ফুসফুসের সংক্রমণে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। তার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তার পরিবার দোয়া চেয়েছে এবং যুক্তরাজ্য, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিত্সক দল এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা তার পুত্র তারেক রহমান ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অংশ, যা গণতন্ত্রের লড়াই থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। তার অবদান এবং বিতর্ক উভয়ই দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। ভবিষ্যতে তার স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

Back to top button
Index