ফিতরা কত টাকা ২০২৩?

এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফিতরা কত টাকা ২০২৩। এই পোস্টে ২০২৩ সালের ফিতরার হার ও ফিতরা আদায় সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। চলুন জেনে নেই এ বছরের ফিতরা কত টাকা?

যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের দিনে নিত্য প্রয়োজনাতিরিক্ত ও ক্ষণমুক্ত নেসাব পরিমাণ যে কোন ধরণের সম্পদের মালিক হয়, তার ওপর নিজের পক্ষ থেকে এবং নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের এই মাসে রোজা পালন শেষে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর অন্যতম মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের আগেই এ সাদকায়ে ফিতর বা ফিতরা দেয়া জরুরি।

এ বিষয়ে ইবনে উমার (রা:) বলেছেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম ১২/৪) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৪১২)

মানুষ যে যে প্রকারের খাবারকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেসব খাবার দিয়ে ফিতরা প্রদান করা সুন্নাত। যেমন- গম, ভুট্টা, চাল, সীমের বিচি, ডাল, ছোলা, গোশত ইত্যাদি।
সহিহ বুখারী (১৫১০) ও সহিহ মুসলিমে (৯৮৫)

ফিতরা কত টাকা ২০২৩? এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আসুন ঈদুল ফিতরের আগে অসহায়দের ফিতরা দিই এবং তাদের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নিই।

২০২২ সালে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ২০২৩ সালের ফিতরা সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা। অর্থাৎ, এ বছরের ন্যূনতম ফিতরার এই হার গতবারের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি।


ফিতরা ২০২৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির এই সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন। উক্ত সভার মাধ্যমেই এ ফিতরা ২০২৩ সালের ফিতরা রেট নির্ধারণ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গত ২রা এপ্রিল ২০২৩, রোববার বেলা ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় ২০২৩ সালের ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ইসলামী শরিয়াহ্‌ মতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যায়। গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (এক শ পনের) টাকা প্রদান করতে হবে। যব দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৩৯৬ টাকা, কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৯৮০ টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৬৪০ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।

ফিতরা ২০২৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা।

দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানেরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। উপর্যুক্ত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজারমূল্যের তারতম্য রয়েছে। তদনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।


২০২৩ সালের ফিতরার পরিমাণ কত টাকা?

সাদাকাতুল ফিতর পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম ইবাদত। ইসলামি শরীয়াহ মতে, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যগুলোর যে কোন একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যায়। ২০২৩ সালের ফিতরার পরিমাণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

এসব পণ্যের বাজারমূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের সর্বোচ্চ বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিটি।

উল্লেখ্য, ওপরে উল্লেখিত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সেই অনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।


ফিতরার পরিমাণ কত ২০২৩

পণ্যের নাম পরিমাণ ফিতরার মূল্য
গম ও আটা আধা সা- ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ১১৫ টাকা
যব এক সা- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ৩৯৬ টাকা
কিসমিস এক সা- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ১,৬৫০ টাকা
খেজুর এক সা- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ১৯৮০ টাকা
পনির এক সা- ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ২৬৪০ টাকা

২০২৩ সালের সাদাকাতুল ফিতরার বাজার মূল্য

এবারের ফিতরা সর্বনিম্ন ১১৫ এবং সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা | Fitra Amount 2023 | Channel 24
ফিতরা কত টাকা ২০২৩? Fita Rate 2023.

ফিতরা কার উপর ওয়াজিব?

ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলেই ঐ ব্যক্তির জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) জাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয়৷ কিন্ত ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র, ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ, ভাড়া বাড়ি, মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) এসবের মূল্যের হিসাবও ফিতরার নেসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে৷


ফিতরা আদায় সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর

নেসাব পরিমাণ সম্পদ কত? 

নিসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে, সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য সম্পত্তি। কোনো ব্যক্তি এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, তাঁর প্রতি নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

কখন ফিতরা দিতে হয়? 

কোনো মুসলমান নারী-পুরুষ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়।


ফিতরা দেওয়ার নিয়ম, কত টাকা থাকলে ফিতরা দিতে হবে?

ফিতরা মূলত আমাদের রোজা সমূহের ভুলত্রুটি বিচ্যুতির কাফফারা স্বরূপ। ঈদের নামাজের আগেই তা অসহায়দের দেয়া উত্তম। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ঈদের আগে ফিতরা না দিলে রোজাদারের রোজা আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলে থাকে।’ তাই ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা দেয়া জরুরি।

কিন্তু! আমরা অনেকেই কত টাকা থাকলে ফিতরা দিতে হবে? কিংবা, সঠিকভাবে ফিতরা দেওয়ার নিয়ম জানিনা। চলুন দেখে নেই, কীভাবে ২০২৩ সালের ফিতরা আদায় করতে হবে।

অনেকেরেই সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে ধারণা নেই। আবার অনেকেই জানে না যে, কত টাকা থাকলে ফিতরা দিতে হয়? সাদকাতুল ফিতর দেবেন কারা? কার ওপর সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব? আসুন জেনে নিই-

যে সম্পদের ফিতরা দিতে হয়

যে ব্যক্তির ওপর জাকাত ওয়াজিব তার ওপর সাদকাতুল ফিতর আদায় করাও ওয়াজিব। তবে সাদকাতুল ফিতর আদায়ে ব্যতিক্রম হলো-

১. জাকাতের নেছাবের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবপত্র ও ঘরের মূল্য ইত্যাদি হিসাবে ধরা হয় না। ২. সাদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে ঘরের অত্যাবশ্যকীয় আসবাব ছাড়া-

তাই ঈদের দিন সকালে নিজের একান্ত অত্যাবশ্যকীয় আসবাব সামগ্রী, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, থাকার ঘর ইত্যাদি বাদ দিয়ে যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা সাড়ে ৭ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) সোনা থাকে তাহলে তাকে ফিতরা আদায় করতে হবে। এ ফিতরা আদায় করা ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।

আবার কারো কাছে সোনা ও রূপা মিলে যে কোনো একটির নিসাব পরিমাণ টাকা থাকে তবে তার ওপর সাদাকাতুল ফিতর দেয়া আবশ্যক। সোনা-রূপা ছাড়াও যদি কারো কাছে কিছু নগদ অর্থ, কিছু ব্যবহারের অতিরিক্ত মালামালসহ মিলিয়ে নেসাব পরিমাণ যে কোনো একটির পরিমাণ সম্পদ থাকে তবে তাকে ফিতরা দিতে হবে। যদি কারো ঋণ থাকে, তবে তা পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পদ হিসাব করতে হবে।

অত্যাবশ্যকীয় আসবাব কী?

১. থাকার ঘর। ২.পরার জন্য কাপড়। ৩. ব্যবহারের গাড়ি ও অন্যান্য একান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যা সব সময় বা প্রায়ই ব্যবহৃত হয়।

এর বাইরে ব্যতিক্রম হলো-

যেসব জিনিস বছরে একবারও ব্যবহার হয় না বা দু’এক বার ব্যবহার হলে তা ব্যবহার না করলেও কোনো সমস্যা নেই। তা হতে পারে-


সমাপিকা

এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা আজকে জানতে পারলাম যে, ফিতরা কত টাকা ২০২৩? এ বছরের ফিতরা কত টাকা? এই পোস্টে সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখিত, নেসাব পরিমান সম্পদের মালিকদের ওপর নির্ধারিত হারে সাধ্যমত সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টাকা ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা উচিত।

এই আর্টিকেলের কোন তথ্য আপনার কাছে ভুল বলে মনে হলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা তা সংশোধন করবো। ধন্যবাদ।

Exit mobile version