গুরুত্বপূর্ণ ১০০+ বাংলা শব্দের শুদ্ধ বানান যা ঘুরেফিরে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে। নিচে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা শুদ্ধ বাংলা বানান দেওয়া হলো।
বানান শুদ্ধিকরণ
আপনি কি জানেন, বাংলা শুদ্ধ বানান জানা আপনার যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি? বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরি, বিসিএস (BCS), বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বা অন্যান্য পেশাগত পরীক্ষায় বাংলা ব্যাকরণ অংশে বানান শুদ্ধিকরণ একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। সামান্য একটি ভুলের জন্য অনেক সময় নম্বর কাটা যায়, যা আপনার সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তাই, যারা গুগলে “বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা শুদ্ধ বানান”, “বাংলা শুদ্ধ বানান”, “বানান শুদ্ধিকরণ” ইত্যাদি কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করছেন, তাদের জন্য এই পোস্টটি একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন। এখানে আমরা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বানানগুলোই নয়, বরং বানান মনে রাখার কিছু কার্যকরী কৌশল এবং সঠিক ব্যাকরণিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।
বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা শুদ্ধ বানান
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বারবার আসা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শুদ্ধ বানান নিচে দেওয়া হলো:
| অশুদ্ধ বানান | শুদ্ধ বানান |
|---|---|
| অতিথী | অতিথি |
| অধ্যায়ন | অধ্যয়ন |
| বিভিষিকা | বিভীষিকা |
| মন্ত্রীসভা | মন্ত্রিসভা |
| মূমুর্ষূ | মুমূর্ষু |
| মনোকষ্ট | মনঃকষ্ট |
| মনোপুত | মনঃপূত |
| ভৌগলিক | ভৌগোলিক |
| ভূল | ভুল |
| শুশ্রষা | শুশ্রূষা |
| মরীচিকা | মরীচিকা |
| আকাঙ্খা | আকাঙ্ক্ষা |
| অন্বেষণ | অন্বেষণ |
| কৃষিজীবি | কৃষিজীবী |
| দূর্ঘটনা | দুর্ঘটনা |
| শিরচ্ছেদ | শিরশ্ছেদ |
| সমীচীন | সমীচীন |
| সায়াহ্ন | সায়াহ্ন |
| মধ্যাহ্ন | মধ্যাহ্ন |
| অপরহ্ণ | অপরাহ্ণ |
| প্রনয়ন | প্রণয়ন |
| প্রণিপাত | প্রণিপাত |
| স্বরস্বতী | সরস্বতী |
| নারিকেল | নারকেল |
| প্রাণীবিদ্যা | প্রাণীবিদ্যা |
| সর্বজনিন | সার্বজনীন |
| মুহুর্ত | মুহূর্ত |
| ইতিমধ্যে | ইতিমধ্যে |
| আবশ্যক | আবশ্যক |
| প্রতিযোগীতা | প্রতিযোগিতা |
এই বানানগুলো বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পরীক্ষা, বিসিএস, এবং অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় প্রায়শই আসে।
সর্বাধিক কমন বাংলা শুদ্ধ বানান
নিচে গুরুত্বপূর্ণ ১০০+ বাংলা শব্দের শুদ্ধ বানান রয়েছে, যা ঘুরেফিরে বিভিন্ন পরীক্ষায় বারবার আসে।
- পুরস্কার ***
- পরিষ্কার ***
- আবিষ্কার ***
- ভূতপূর্ব ***
- বহির্ভূত ***
- দূরীভূত***
অত্যাধিক কমন
- মধ্যাহ্ন **
- সায়াহ্ন **
- পূর্বাহ্ণ **
- অপরাহ্ণ **
- পরিমাণ **
- প্রতিযোগী **
- প্রতিযোগিতা **
- নমস্কার **
- অঞ্জলি **
- গীতাঞ্জলি **
- শ্রদ্ধাঞ্জলি **
- চাকরিজীবী **
- পেশাজীবী **
- আইনজীবী **
- ক্ষীণজীবী **
কমন বাংলা শুদ্ধ বানান
- মধ্যাহ্ন **
- সায়াহ্ন **
- অন্বেষণ
- পূর্বাহ্ণ **
- অপরাহ্ণ **
- অভ্যন্তরীণ
- নিরীক্ষণ
- প্রণয়ন
- প্রণিপাত
- প্রবণ
- কল্যাণ
- নিক্কণ
- মূর্ধন্য
- বিপণি
- বণ্টন
- মনোহারিণী
- রূপায়ণ
- গণনা
- সম্পূর্ণ
- ব্যাকরণ
- বক্ষমাণ
- পরিবহণ
- পূণ্য
- অরণ্য
- স্থাণু
- চাণক্য
- বাণী
- লবণ
- ধরন
- শূন্য
- পুরস্কার ***
- পরিষ্কার ***
- আবিষ্কার ***
- কৃপণ
- প্রেরণ
- গ্রহণ
- ধারণা
- তৃণ
- লক্ষণ
- নিরূপণ
- নির্নিমেষ
- ক্রন্দন
- সূদন
- পুরনো
- মাণিক্য
- গণ
- বণিক
- গভর্নর
- কর্নেল
- প্রণয়
- রোপণ
- পরিমাণ **
- ঘণ্টা
- লণ্ঠন
- প্রতিযোগী **
- প্রতিযোগিতা **
- সহযোগী
- সহযোগিতা
- দুর্দিন
- দুর্নাম
- দুরবস্থা
- দুর্নীতি
- দুর্ভোগ
- দুর্যোগ
- দূরীকরণ
- অদূর
- দূরত্ব
- দূরবীক্ষণ
- দূর
- দূরবর্তী
- দুর্বল
- দুর্জয়
- দুরারোগ্য
- দুরাকাঙ্ক্ষা
- দুরন্ত
- কার্যাবলি
- শর্তাবলি
- ব্যাখ্যাবলি
- নিয়মাবলি
- তথ্যাবলি
- রচনাবলি
- তিরস্কার
- তেজস্ক্রিয়
- নমস্কার **
- পুরস্কৃত
- আইসক্রিম
- স্টিমার
- জানুয়ারি
- ফেব্রুয়ারি
- প্রাইমারি
- মার্কশিট
- গ্রেডশিট
- আয়ুষ্কাল
- আবিষ্কার ***
- আয়ুষ্কর
- শুষ্ক
- বাধাগ্রস্ত
- বিপদগ্রস্ত
- ক্ষতিগ্রস্ত
- হতাশাগ্রস্ত
- অঞ্জলি *
- গীতাঞ্জলি **
- শ্রদ্ধাঞ্জলি **
- সোনালি
- রূপালি
- বর্ণালি
- হেঁয়ালি
- খেয়ালি
- মিতালি
- জীবিত
- জীবিকা
- সজীব
- নির্জীব
- রাজীব
- চাকরিজীবী **
- পেশাজীবী **
- আইনজীবী **
- ক্ষীণজীবী **
- অদ্ভুত
- ভুতুড়ে
- উদ্ভূত
- ভূত
- ভূতপূর্ব ***
- বহির্ভূত ***
- ভস্মীভূত
- অভিভূত
- দূরীভূত***
- ব্যাকুল
- নিরহংকার
বানান মনে রাখার কার্যকরী কৌশল ও ব্যাকরণিক নিয়ম
বাংলা বানান মনে রাখা অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও, কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকরণিক নিয়ম এবং কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নিচের নিয়মগুলো আপনাকে বানান নির্ভুলভাবে লিখতে এবং মনে রাখতে সাহায্য করবে:
১. ণত্ব-বিধান (কোথায় ‘ন’ এবং কোথায় ‘ণ’ হবে)
ণত্ব-বিধান হলো দন্ত্য ‘ন’ মূর্ধন্য ‘ণ’-এ পরিণত হওয়ার নিয়ম।
- নিয়ম: ট-বর্গীয় ধ্বনির (ট, ঠ, ড, ঢ) আগে সবসময় ‘ণ’ হয়। যেমন: কণ্ঠ, বণ্টন, লুণ্ঠন, কাণ্ড।
- নিয়ম: ঋ, র, ষ-এর পরে ‘ণ’ হয়। যেমন: ঋণ, বর্ণ, কারণ, মরণ, ভূষণ, ভাষণ।
- নিয়ম: কিছু স্বভাবতই ‘ণ’ হয় (এদের কোনো নিয়ম নেই, মনে রাখতে হয়)। যেমন: বাণিজ্য, লবণ, মনু, পুণ্য, অণু।
২. ষত্ব-বিধান (কোথায় ‘স’ এবং কোথায় ‘ষ’ হবে)
ষত্ব-বিধান হলো দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’-এ পরিণত হওয়ার নিয়ম।
- নিয়ম: অ, আ বাদে অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে দন্ত্য ‘স’ মূর্ধন্য ‘ষ’ হয়। যেমন: অভিষেক (ই-কারের পরে), বিষম, ভবিষ্যৎ, মুমূর্ষু।
- নিয়ম: ঋ-কারের পরে সবসময় ‘ষ’ হয়। যেমন: কৃষি, ঋষি, বৃষ্টি।
- নিয়ম: সংস্কৃত শব্দে ‘ট’ ও ‘ঠ’-এর আগে ‘ষ’ হয়। যেমন: কষ্ট, নষ্ট, ওষ্ঠ।
- নিয়ম: দেশি, বিদেশি ও তদ্ভব শব্দে কখনোই ‘ষ’ হয় না। যেমন: জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পুলিশ।
৩. ই-কার এবং ঈ-কারের ব্যবহার
- নিয়ম: বিদেশি শব্দে সবসময় ই-কার (ই) হয়। যেমন: ইংরেজি, সরকারি, বেসরকারি, কমিটি, ডিগ্রি, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, নভেম্ব্বর, ডিসেম্ব্বর, স্টেশন।
- নিয়ম: পদের শেষে ‘ইনী’ (স্ত্রীবাচক শব্দে) বা ‘ঈ’ থাকলে ঈ-কার (ঈ) হয়। যেমন: ছাত্রী, জননী, দুঃখিনী, কল্যাণী।
- নিয়ম: বিশেষণবাচক ‘আলি’ প্রত্যয়ে ই-কার হয়। যেমন: রূপালি, সোনালি, বর্ণালি।
- নিয়ম: অঞ্জলি, আবলি, কারি ইত্যাদি শব্দে ই-কার হয়। যেমন: শ্রদ্ধাঞ্জলি, গীতাবলি, মিতালী।
৪. বিসর্গ ব্যবহারের নিয়ম
- নিয়ম: বাংলা শব্দে সাধারণত বিসর্গ ব্যবহৃত হয় না। এটি কেবল সংস্কৃত বা তৎসম শব্দে ব্যবহৃত হয়। যেমন: দুঃখ, মনঃকষ্ট, অতঃপর, প্রধানত।
- নিয়ম: কোনো কোনো শব্দে পদের শেষে বিসর্গ থাকলে তা উঠে যায়। যেমন: আগে: কার্যতঃ > এখন: কার্যত, আগে: মূলতঃ > এখন: মূলত।
৫. সমাসবদ্ধ পদের নিয়ম
- নিয়ম: সমাসবদ্ধ শব্দে প্রথম পদের শেষে ই-কার হয় (ঈ-কার নয়)। যেমন: প্রাণী + বিদ্যা = প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী + সভা = মন্ত্রিসভা, পক্ষী + রাজ = পক্ষীরাজ, গুণী + জন = গুণীজন।
৬. কিছু বিশেষ বানান মনে রাখার কৌশল
- ভুল vs ভূল: ‘ভুল’ শব্দটি আরবি, তাই এটি কখনোই ‘ভুল’ (দীর্ঘ ঊ-কার) হবে না, সবসময় ‘ভুল’ (হ্রস্ব উ-কার) হবে।
- লক্ষ্মী vs লক্ষী: ‘লক্ষ্মী’ বানানে সবসময় ক্ষ্মী হবে (বিসর্গ ছাড়া)।
- মুহূর্ত: এই বানানে প্রথমে হ্রস্ব উ-কার এবং পরে দীর্ঘ ঊ-কার হয়।
- পরিষ্কার: ‘পরি’ উপসর্গের পর ‘স’ বসলে তা মূর্ধন্য ‘ষ’ হয় (পরিষ্কার)। কিন্তু ‘পুরস্কার’ বানানে ‘স’ হয়, কারণ সেখানে ‘অ’ ধ্বনি আছে।
এই নিয়মগুলো বারবার অনুশীলন করুন এবং যেসব বানান পরীক্ষায় বেশি আসে, সেগুলো একটি খাতায় লিখে প্রতিদিন চোখ বুলিয়ে নিন। এতে আপনার বানান দক্ষতা বাড়বে এবং পরীক্ষার হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
উপসংহার
সঠিক বাংলা শুদ্ধ বানান আয়ত্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য নয়, বরং প্রাত্যহিক জীবনেও নির্ভুল বাংলা লেখা আমাদের পেশাদারিত্ব ও ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। এই পোস্টে আলোচিত বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা শুদ্ধ বানান গুলো নিয়মিত চর্চা করলে এবং ব্যাকরণিক নিয়মগুলো মনে রাখলে আপনার বানান শুদ্ধিকরণ দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
