ePassport

পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এবং করনীয়

পাসপোর্ট আবেদন করার পর, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে, পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন অন্যতম একটি ধাপ। এই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন যত দ্রুত সম্পন্ন হবে, ততো দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে।

ই-পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন সাধারণত কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে এবং ভেরিফিকেশন এর সময় আপনাদের কি কি করণীয় , ভেরিফিকেশন করতে কোন টাকা লাগে কিনা এগুলো জানানোর চেষ্টা করব।

পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কী?

পুলিশ ভেরিফিকেশন হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে পুলিশ একজন ব্যক্তির প্রদত্ত তথ্যাদির সত্যতা যাচাই করে। ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় স্থানীয় থানার একজন এসআই প্রার্থীর নিচের কয়েকটি তথ্য যাচাই করে থাকে-

  • আবেদনকারীর জাতীয়তা ( অর্থাৎ বাংলাদেশের নাগরিক কিনা)
  • স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা
  • কর্মসংস্থান
  • পারিবারিক অবস্থা
  • আদালতে তার বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা আছে কি না ইত্যাদি তথ্য যাচাই করে।
  • পূর্বে কোন মামলা থেকে থাকলে সেই মামলা খারিজ হয়েছে এই মর্মে তথ্যাদি যাচাই করে।

ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে কত সময় লাগে?

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের প্রক্রিয়াটি দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। আবার অনেক অনেক ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কারণে এটি দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ১৯ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যায়।

আপনার ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স যদি দ্রুত হয়ে যায় এবং ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট যদি ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে প্রেরণ করা হয় তাহলে খুবই দ্রুত পাসপোর্ট অফিসের  একজন Assistant Director/ Deputy Director আপনার পাসপোর্টের কাগজপত্র পরীক্ষা করে চূড়ান্তভাবে পাসপোর্ট এর অনুমোদন প্রদান করবে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পরে অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি অনলাইন স্ট্যাটাস পরিবর্তন না হয় তাহলে Hello SB মোবাইল এপ ব্যবহার করে আপনার পাসপোর্ট রেফারেন্স নাম্বার ও বিস্তারিত লিখে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।

পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন কি কি লাগে

পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। এখানে আবেদনকারীর এমন একটা ভূমিকা নেই বললে চলে। থানা থেকে একজন নির্ধারিত পুলিশ কর্মকর্তা আবেদনকারী ব্যাপারে সততা যাচাই করবে। এ ব্যাপার তার ব্যক্তিগত এবং আনুষঙ্গিক তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র এবং নাগরিক সনদ চাওয়া হতে পারে।

ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া

পাসপোর্ট আবেদনের পরে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার সময় যখন আপনি পাসপোর্ট স্ট্যাটাস যাচাই করতে যাবেন তখন আপনাকে Enrolment Pending SB Police verification মেসেজটি দেখানো হবে ,

passport police verification
passport police verification

এর পরে ধরে নিতে হবে আপনার পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য অপেক্ষমান। এরপরে আপনার স্থায়ী ঠিকানার স্থানীয় থানার একজন এসআই পাসপোর্ট আবেদনের ২ থেকে ৪ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার নাম্বারে কল দিবেন। এবং আপনার সম্পর্কে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন, এছাড়াও সরাসরি আপনাকে দেখা করতে থানায় হাজির করতে বলা হতে পারে। এবং সাথে পাসপোর্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট যেমন

  1. পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর ফটোকপি ( থাকলে)
  2. নাগরিক সনদ
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র
  4. পূর্বে কোন মামলা থাকলে সেই মামলার খারিজ সম্পর্কিত নথি

এই সমস্ত ডকুমেন্ট সাথে করে নিয়ে যাবেন। সমস্ত তথ্যের মেইন কপি এবং ফটোকপি সাথে নেওয়া ভালো, কারণ ফটোকপি থানায় জমা দিয়ে রেখে আসতে হতে পারে।

ই পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য করনীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

  • সঠিক তথ্য প্রদান করা (পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। কোনো ভুল তথ্য প্রদান করলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে বা বাতিল হতে পার)
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা (পাসপোর্ট পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কাগজপত্রের অভাবে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে)
  • পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় সহযোগিতা করা ( পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় প্রার্থীকে পুলিশের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। পুলিশের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে)
  • সাধারণভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন এর ক্ষেত্রে কোন টাকা পয়সা দেয়ার প্রয়োজন হয় না, আপনার কাছে যদি কোন কর্মকর্তা টাকা পয়সা দাবি করে থাকে তাহলে সেটি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। তবে আপনি যদি চান আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশনটি দ্রুত হবে তাহলে কিছু টাকা পয়সা খরচ করে যথাযথ দ্রুত সম্ভব পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট বের করে ফেলতে পারেন। তবে এটি রেকমেন্ডেট না।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেগেটিভ আসলে করণীয় কি? এবং নেগেটিভ আসার কারণ

বেশ কয়েকটি কারণে আপনার ই পাসপোর্ট পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ক্ষেত্রে নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে। প্রথমেই আপনাকে নিজেকে ধরে নিতে হবে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় আপনি আপনার করণীয়গুলো সম্পূর্ণরূপে করেছেন কিনা। যদি কোন ভাবে আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তাহলে সেটির বিপরীতে আবেদন করে বিষয়টি সমাধান করতে পারবেন। তবে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কি কি কারণে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেগেটিভ আসেঃ

নেগেটিভ আসার কারণ

  • ঠিকানা ভুল: যদি আপনার দেয়া ঠিকানা বাস্তব না হয় বা আপনার বাসায় কেউ আপনাকে চিনতে না পারে, তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসতে পারে।
  • বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী না পাওয়া যাওয়া: যদি আপনার দেয়া বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী পুলিশ আপনাকে না খুঁজে পায়, তাহলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসতে পারে।
  • ফৌজদারী মামলা: আপনার বিরুদ্ধে যদি কোনো ফৌজদারী মামলা থাকে, তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসতে পারে।
  • পূর্ববর্তী মামলার খারিজ হওয়ার তথ্য প্রদান না করাঃ  আপনার বিরুদ্ধে যদি পূর্বেই কোন মামলা থেকে থাকে এবং সেই মামলা যদি খারিজ হয়ে থাকে তাহলে সেই খারিজ হওয়ার ডকুমেন্ট আপনাকে থানা জমা দিতে হবে, যদি না করেন তাহলে আপনার ভেরিফিকেশন নেগেটিভ হবে।
  • ভুল তথ্য প্রদান: আপনার দেয়া যেকোনো তথ্য যদি ভুল হয়, তাহলেও পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি আপনার পেশা ভুল বলেন, তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে পাসপোর্ট স্টাটা যাচাই করলে Enrolment Pending SB Police verification এর বদলে Sent for Rework লেখা আসবে তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার রিপোর্টটি নেগেটিভ।

নেগেটিভ আসলে করণীয়

পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আসলে করণীয় কাজগুলি হলো:

  1. প্রথমে আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন নেগেটিভ আদেশের কারণ জানতে হবে। আদেশটিতে কারণ উল্লেখ করা থাকে। কারণটি জানলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার আবেদনে কী ধরনের ভুল আছে বা কী ধরনের কাগজপত্রের অভাব আছে।
  2. কারণটি জানার পর আপনাকে ভুল সংশোধন করতে হবে। যদি আপনার আবেদনপত্রে কোনো ভুল থাকে, তাহলে সেই ভুল সংশোধন করুন। যদি কোনো কাগজপত্রের অভাব থাকে, তাহলে সেই কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।
  3. ভুল সংশোধন করার পর আপনি পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনপত্রে ভুল সংশোধন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করুন।

আপনি যদি ভেরিফিকেশন এর জন্য পুনরায় আবেদন করেন তাহলে আপনাকে একটি দরখাস্ত লিখিত আকারে পাসপোর্টের সহকারী পরিচালক এর নিকট পাঠাতে হবে। এবং দরখাস্তে আপনার পাসপোর্ট এর রেফারেন্স নাম্বার বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং আপনার জন্ম তারিখ, এবং আপনার বিস্তারিত তথ্যগুলো উল্লেখ করুন। উদাহরণঃ

বরাবর

সহকারী পরিচালক

বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা  ।

বিষয়ঃ ভুল সংশোধন পূর্বক পূণঃ পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসঙ্গে।

জনাব

যথাযথ সম্মান এর সাহিত বিনীত নিবেদন এই যে; আমিঃ আব্দুল জব্বার হাওলাদার, পিতাঃ আঃ মতিন . মাতাঃ আলেয়া বেগম, গ্রামঃ মাধবপাশা, ডাকঘরঃ মাধবপাশা, থানাঃ বাবুগঞ্জ, জেলাঃ বরিশাল। পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ নাম্বার 4001-0000…….. / OID: 1234xxxx….. জন্ম তারিখঃ ০২/০৮/১৯৯৮ ইং।

ই পাসপোর্ট আবেদনে আমার ………………..ভুল হওয়ার কারনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেগেটিভ আসে। নেগেটিভ আসার কারণগুলো আমি পর্যালোচনা করেছি এবং নিজের ভুল স্বীকার করে কারণগুলো সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছি।

অতএব, এ প্রেক্ষিতে উক্ত আবেদনের………………. পূনঃ পুলিশ তদন্ত পাঠাতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিনীত

নাম

মোবাইল নাম্বার:

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Index

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.