বঙ্গবন্ধু টানেলে কোন গাড়িতে কত টাকা টোল দিতে হবে
বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল নির্ধারণ ও গাড়ি ধরণের ভিত্তিতে টোলের বিস্তারিত তথ্য জানতে এই পোস্ট দেখুন।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যান চলাচলের টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। ২৮শে অক্টোবরে চালু হতে যাওয়া এ টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। টানেলের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল বা দুই চাকার কোনো যান চলাচল করতে পারবে না।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার সঙ্গে আনোয়ারাকে যুক্ত করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। আগামী ২৮শে অক্টোবর ২০২৩ তারিখে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। উদ্বোধনের পরের দিন সবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল নির্ধারণ
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে, চীনের সাংহাই শহরের আদলে, ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ে তোলার লক্ষে এই প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এটি চালু হলে, তা যুক্ত করবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম আর বন্দর নগরীকে। তাই, টানেলে ভেতর দিয়ে চলতে হলে কোন গাড়িকে কত টাকা টোল দিতে হবে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যান চলাচলের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেতু বিভাগের গেজেট অনুযায়ী, টানেল পার হতে হলে গাড়িভেদে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা টোল দিতে হবে।
কোন গাড়ির কত টোল
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ২০২২ টোলের হার প্রস্তাব করেছিল সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত টোলের হারে কোন পরিবর্তন করা হয়নি। টানেলের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল বা দুই চাকার কোন যান চলাচল করতে পারবে না।
সেতু কর্তৃপক্ষের গেজেট অনুযায়ী, টানেলের ভেতর দিয়ে চলতে হলে, কার ও জীপকে দিতে হবে ২০০ টাকা, একই হারে টোল দিতে হবে পিকআপকেও। আর মাইক্রোবাসকে পরিশোধ করতে হবে ২৫০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে ৩১ আসন বা এর কম আসনের গাড়িকে দিতে হবে ৩০০ টাকা। ৩২ আসন বা এর বেশি আসনের বাসগুলোকে পরিশোধ করতে হবে ৪০০ টাকা করে। ৩ এক্সেলের বাসের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এছাড়া ৫ টনের ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ৫০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ৬০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
টানেলের ভিতর দিয়ে যেতে হলে ৩ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরকে দিতে হবে ৮০০ টাকা করে। ৪ এক্সেলের ট্রাক বা ট্রেইলরের জন্য ১০০০ টাকা। আর ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা করে দিতে হবে টোল।
সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাওয়া কর্ণফুলী টানেলের ভেতর দিয়ে ১২ ধরনের যানের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গাড়ির ধরণ | টোল দর |
---|---|
প্রাইভেট কার | ২০০ টাকা |
জিপ | ২০০ টাকা |
পিকআপ | ২০০ টাকা |
মাইক্রোবাস | ২৫০ টাকা |
বাস (৩১ সিটের কম) | ৩০০ টাকা |
বাস (৩২ আসনের বেশি) | ৪০০ টাকা |
বাস (৩ এক্সেল) | ৫০০ টাকা |
ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) | ৪০০ টাকা |
ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন) | ৫০০ টাকা |
ট্রাক (৮ দশমিক ০১ থেকে ১১ টন) | ৬০০ টাকা |
ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল) | ৮০০ টাকা |
ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল) | ১০০০ টাকা |
চার এক্সেলের বেশি ট্রাক ও ট্রেইলার | ১০০০ টাকা সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা |
কর্ণফুলী টানেলে টোলের হার নির্ধারণ:
বঙ্গবন্ধু টানেলে যাওয়ার জন্য আপনি নিম্নলিখিত টোল দিতে হবে, যা আপনার যানবাহনের ধরণ এবং আসন অনুযায়ী পরিবর্তন পাবে:
- প্রাইভেটকার ও জিপ: সর্বনিম্ন ২০০ টাকা টোল দিতে হবে।
- পিকআপ: ২০০ টাকা
- মাইক্রোবাস: ২৫০ টাকা
- বাস (৩১ সিটের কম): ৩০০ টাকা
- বাস (৩২ আসনের বেশি): ৪০০ টাকা
- বাস (৩ এক্সেল): ৫০০ টাকা
- ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত): ৪০০ টাকা
- ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন): ৫০০ টাকা
- ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল): ৮০০ টাকা
- ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল): ১০০০ টাকা
- চার এক্সেলের বেশি ট্রাক ও ট্রেইলার: ১০০০ টাকা, প্রতি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।
আরো দেখুন: পদ্মা সেতুর টোলের হার
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কোথায় অবস্থিত?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা বঙ্গবন্ধু সুড়ঙ্গ বা কর্ণফুলী টানেল হল কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সড়ক সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি নির্মিত হলে এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
কেন এ টানেল তৈরি করা হয়েছে?
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।