কোরবানি

কোরবানীর সুস্থ গরু চেনার উপায়

আমাদের দেশে কোরবানির হাটে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পশুই হলো গরু। আজকের পোস্টে আমরা, কেমন পশু কোরবানী দেওয়া হালাল? এবং কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায় সম্পর্কে জানবো। এই পোস্টে কুরবানীর জন্য উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর প্রাণী চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কেমন পশু কোরবানী দেওয়া হালাল?

শুধুমাত্র ছয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। যথা: ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট। এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় না।

হালাল বন্য পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না; যদিও তা কেউ লালন-পালন করে থাকুক না কেন। যেমন: হরিণ, কেউ যদি কোনো হরিণের বাচ্চা ছোটবেলা থেকে গৃহপালিত পশুর মতো পালতে থাকে, তবু তা দ্বারা কোরবানি হবে না। কারণ স্বভাবত এরা গৃহপালিত নয়।

কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বার এক বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয় তাহলে চলবে। উল্লিখিত পশুগুলো নর-মাদি যা-ই হোক না, তা দ্বারা কোরবানি হবে।

কোরবানির পশু তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কোনো খুঁত থাকলে সে পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না। যেমন: লেজের বা কানের বেশির ভাগ অংশ কাটা থাকা, অন্ধ বা এক চোখ কানা হওয়া, এক পা খুঁড়িয়ে চলা বা চলনশক্তিহীন হওয়া, উভয় শিং বা কোনো এক শিং মূল থেকে উত্পাটিত হওয়া।

কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

কোরবানির পশুর হাটে কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন গরু সুস্থ-সবল কি না। চলুন জেনে নেয়া যাক, কী কী উপায়ে বুঝতে পারবেন কোরবানির পশু সুস্থ কি-না।

সুস্থ পশু চেনার উপায়

  • ১. পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হয়।
  • ২. সুস্থ পশু অবসরে জাবর কাটে (পান চিবানোর মতো)।
  • ৩. কান নাড়ায় ও লেজ দিয়ে মাছি তাড়ায়।
  • ৪. বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সহজেই রেগে যায়।
  • ৫. গোবর স্বাভাবিক থাকে।
  • ৬. দেখতে প্রাণবন্ত, চামড়া ঝকঝকে দেখায়।
  • ৭. পাঁজরের হাড় উঁচু-নিচু থাকে।
  • ৮. নাকের ওপরের অংশ ভেজা মনে হয়।
  • ৯. খাবার এগিয়ে দিলে জিব দিয়ে তাড়াতাড়ি টেনে নেয়ার চেষ্টা করে।
  • ১০. গরুর তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থাকতে হবে। পায়ুপথে থার্মোমিটার ঢুকিয়ে এক মিনিট রেখে গরুর গায়ে বা চামড়ায় চেপে ধরলেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা যাবে।
  • ১১. গরু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেবে। স্বাভাবিক অবস্থায় গরু মিনিটে ১৫-১৬ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়।

গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিয়ে দেখুন, চাপ বসে গেলে বা গর্ত হয়ে গেলে বুঝবেন স্টেরয়েড খাওয়ানো রোগাক্রান্ত গরু।

গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিয়ে দেখুন, চাপ বসে গেলে বা গর্ত হয়ে গেলে বুঝবেন স্টেরয়েড খাওয়ানো রোগাক্রান্ত গরু। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা গরু জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।

স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা গরু জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

সুস্থ গরুর মুখ দিয়ে সবসময় লালা ঝরে।

সুস্থ গরুর মুখ দিয়ে সবসময় লালা ঝরে। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

সুস্থ গরু সাধারণত চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। অপর দিকে, এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরু খুব বেশি শান্ত স্বভাবের হয়। চাঞ্চল্য খুবই কম থাকে।

সুস্থ গরু সাধারণত চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। অপর দিকে, এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরু খুব বেশি শান্ত স্বভাবের হয়। চাঞ্চল্য খুবই কম থাকে। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরুর সামনে খড় কিংবা প্রচলিত খাবার ধরলে আগ্রহ করে খায় না।

এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরুর সামনে খড় কিংবা প্রচলিত খাবার ধরলে আগ্রহ করে খায় না। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

সুস্থ গরুর শরীর থাকে সুঠাম। এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরুর মুখ ও পায়ের অংশে ফোলা থাকতে পারে।

সুস্থ গরুর শরীর থাকে সুঠাম। এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো গরুর মুখ ও পায়ের অংশে ফোলা থাকতে পারে। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

সুস্থ গরুর নাকের ওপরটা সবসময় ভেজা ভেজা থাকে। কিন্তু, অসুস্থ গরুর নাক দিয়ে তরল নির্গত হতে পারে।

সুস্থ গরুর নাকের ওপরটা সবসময় ভেজা ভেজা থাকে। কিন্তু, অসুস্থ গরুর নাক দিয়ে তরল নির্গত হতে পারে। - কোরবানীর জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু ও সুস্থ গরু চেনার উপায়
কোরবানির জন্য সুস্থ গরু চেনার উপায়

অসুস্থ পশু চেনার উপায়

  • ১. পশুটি ভালোভাবে খেতে চায় না।
  • ২. হেলেদুলে ও ধীরে চলে।
  • ৩. রোদে কম থাকতে চায়, ধীরে ধীরে ছায়া খোঁজে।

কোরবানির জন্য পশু নির্বাচনের চারটি টিপস

পশুর ন্যূনতম বয়স

ভাল কোরবানির পশু বেছে নেওয়ার প্রথম দিকটি হল কোরবানির পশুর বয়স। কোরবানীর প্রাণী যেমন ছাগল এবং ভেড়ার বয়স কমপক্ষে এক বছর এবং গরু এবং মহিষের বয়স অবশ্যই দুই বছর হতে হবে।

“কোরবানীর জন্য উপযুক্ত প্রাণী খুঁজে বের করার আরেকটি উপায়, পশুর দাঁতের দিকে তাকানো। “কোরবানীর জন্য উপযুক্ত প্রাণীটি দাঁতের পরিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, অর্থাৎ যদি সামনের দুটি দাঁত পড়ে যায়,” তাহলে এটি কোরবানীর জন্য উপযুক্ত।

প্রাণীদেহের আকৃতি

দ্বিতীয় দিক হল শরীরের আকৃতি, এটি বিকৃত করা উচিত নয়। কোরবানি করা পশুদের শরীরের দৈর্ঘ্য, উচ্চতা, সামঞ্জস্য এবং ত্রুটি পরীক্ষা করা আবশ্যক। পশু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে হবে। এছাড়াও, কোরবানির পশুর মেরুদণ্ড সমতল বা সোজা হওয়া উচিত, শিংগুলি ভারসাম্যপূর্ণ এবং পাগুলি প্রতিসম বা সমান হবে।

“আরেকটি বৈশিষ্ট্য, প্রাণীর পেট, সামনে এবং পিছনের পা, মাথা এবং ঘাড়ের আদর্শ ভঙ্গিতে সমন্বয় থাকবে”।

পশুর স্বাস্থ্য

তৃতীয় দিকটি হল পশুর স্বাস্থ্য। শারীরিকভাবে সুস্থ প্রাণীর বৈশিষ্ট্য হল সক্রিয় এবং প্রতিক্রিয়াশীল প্রাণী যখন কারো কাছে আসে। সুস্থ প্রাণী হবে চটপটে, শক্তিশালী, প্রাণবন্ত, অলস নয়, উত্তেজিত হবে না এবং ভালো ক্ষুধা পাবে।

তদুপরি, সুস্থ প্রাণীদেরও সূক্ষ্ম চুল থাকে যা চকচকে এবং সহজে পড়ে না। চুলও দাঁড়ায় না এবং রং পরিবর্তন হয়। প্রাণীর চামড়া চামড়ার পরজীবী যেমন মাইট, টিক্স, মাছি ইত্যাদি থেকে মুক্ত হবে।

“সচেতন থাকুন, যদি পশুর চামড়া নিস্তেজ দেখায় এবং শরীর চিকন হয়, তার মানে প্রাণীটিতে কৃমি আছে।”

কোরবানির পশুতে যে রোগটি প্রায়ই দেখা দেয় তা হল ক্লান্তি যা বিতরণ প্রক্রিয়ার কারণে ঘটতে পারে। কোরবানির পশুও প্রায়শই ডায়রিয়া এবং তিন দিনের জ্বর বা বোভাইন ইফেমেরাল ফিভার (BEF) অনুভব করে। তারা অবশ্যই স্ক্যাবিস মুক্ত হতে হবে।

পশুর ওজন শতাংশ

শেষ দিক হল মৃতদেহের ওজনের শতাংশ। জবাই করার পর মৃতদেহ পশুর অংশ যা মাথা, পা, চামড়া এবং ভিতরের অংশ ছাড়াই মাংস এবং হাড় নিয়ে গঠিত।

জীবিত অবস্থায় প্রাণীর ওজনের উপর ভিত্তি করে মৃতদেহ গণনা করা হয়। একটি রেফারেন্স হিসাবে, পিও গবাদি পশুর (অঙ্গোল জাত) মৃতদেহের ওজন 40-45 শতাংশ, বালি গবাদি পশু ৫২-৫৫ শতাংশ, মাদুরা গবাদি পশু ৪৬-৪৮ শতাংশ, লিমুজিন গবাদি পশু ৫২ শতাংশ এবং সিমেন্টাল জাতের গবাদি পশুর ৫১ শতাংশ হতে হবে। (*)

উপরের চারটি টিপস এই সাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। Four Tips in Choosing Animals for Qurban


কৃতজ্ঞতা:
শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি।
ছবি কৃতজ্ঞতা: কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই।
Somoy TV & Unair News.

কিউএনএবাংলা.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় শিক্ষা, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, সরকারি সেবা, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন qnabangla.com@gmail.com ঠিকানায়।
নিয়মিত আমাদের আপডেট পেতে গুগল নিউজ ফিডটি অনুসরণ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.