সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস চেনার সহজ উপায় বা কৌশলগুলো শিখতে চান? সমাস বাংলা ব্যাকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অনেকে বলে সমাস শিখতে ৬ মাস লাগে। কিন্ত আজ এমন কিছু টেকনিক শেয়ার করব যেগুলো শিখলে ব্যাসবাক্য দেখলেই বুঝতে পারবে সেটা কোন সমাস। যদিও সব জায়গায় মিলবেনা কিছু ব্যাতিক্রম থাকবে।
বাংলা ব্যাকরণে সমাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই পোস্টের মূল উদ্দেশ্য হলো যাদের সমাস নিয়ে কিঞ্চিত ধারণা পর্যন্ত নেই, তারা যেনো সামান্য হলেও উপকৃত হয়।
সমাস
সমাস সংস্কৃত ভাষার একটি শব্দ। সমাস শব্দের অর্থ হচ্ছে মিলন, সংক্ষেপণ, একপদীকরণ। বাক্যে শব্দের অধিক ব্যাবহার কমানোর জন্য সমাস ব্যাবহৃত হয়।
বাংলা ব্যাকরণের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক সমাস। চাকরির পরীক্ষা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তী, স্কুল কলেজ সহ শিক্ষা জীবনের প্রায় সকল পর্যায়েই বাংলা ব্যাকরণের সমাস টপিক টির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু এই সমস নিয়ে শিখার্থীদের মধ্যে নানা ভীতি দেখা যায়। আজকের এই আর্টিক্যাল টি পড়ার পর আশাকরি সমাস নিয়ে আপনার আর কোন সমস্যা থাকবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক সমাস কি, সমাস কত প্রকার ও কি কি, এছাড়াও সমাস নিয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য।
সমাস কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী
সমাস কাকে বলে?
‘সমাস‘ শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, সম্ + অস্ = সমাস। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি হয়। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়।
অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠন প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
সমাস কত প্রকার
প্রচলিত নিয়মানুসারে নীচে ছয় ধরনের সমাস আলোচনা করা হয়েছে:

- ১. দ্বন্দ্ব সমাস
- ২. কর্মধারয় সমাস
- ৩. তৎপুরুষ সমাস
- ৪. বহুব্রীহি সমাস
- ৫. দ্বিগু সমাস
- ৬. অব্যয়ীভাব সমাস
এই সমাসগুলোও আরো অনেকভাগে বিভক্ত। বিস্তারিত ব্যাকরণ বইয়ে দেখে নিন।
শর্টকাটে সমাস শিখি
দ্বন্দ্ব সমাস
দ্বন্দ্ব সমাস: যেসব ব্যাসবাক্যের মাঝে “ও” / “আর” / “এবং” থাকবে সেগুলো দ্বন্দ্ব সমাস।
যেমন:
আয় ও ব্যয়=আয়ব্যয়,
ইতর ও ভদ্র=ইতরভদ্র।
তৎপুরুষ সমাস
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ: ব্যাসবাক্যের মাঝে “কে” থাকলে তা দ্বিতীয়া।
যেমন:
গাকে ঢাকা= গা-ঢাকা।
খোদাকে ভক্তি= খোদাভক্তি
তৃতীয়া তৎপুরুষ: ব্যাসবাক্যের মাঝে “দ্বারা” “দিয়ে” থাকলে তা তৃতীয়া।
যেমন:
মধু দ্বারা মাখা=মধুমাখা
মন দিয়ে গড়া=মনগড়া
ঘি দ্বারা ভাজা=ঘিভাজা
চতুর্থী তৎপুরুষ: ব্যাসবাক্যের মাঝে “জন্যে” “নিমিত্ত” আর বাক্যের প্রথম শব্দের শেষে “র” থাকবে তখন চতুর্থী।
যেমন:
বিয়ের জন্যে পাগল=বিয়েপাগল
বসতের নিমিত্ত বাড়ি=বসতবাড়ি
হজ্জের জন্যে যাত্রা=হজ্জযাত্রা
পঞ্চমী তৎপুরুষ: যে সব ব্যাসবাক্যের মাঝে “হতে” “থেকে” তা পঞ্চমী।
যেমন:
আদি হতে অন্ত=আদিঅন্ত
বিলাত থেকে ফেরত=বিলাতফেরত
ষষ্ঠী তৎপুরুষ: যে সব ব্যাসবাক্যে প্রথম শব্দের শেষে “র” থাকবে কিন্ত জন্যে নিমিত্ত এগুলো থাকবেনা তখন ষষ্ঠী।
যেমন:
বিড়ালের ছানা=বিড়ালছানা
কর্মের কর্তা=কর্মকর্তা
সপ্তমী তৎপুরুষ: যেসব ব্যাসবাক্যে প্রথম শব্দের শেষে “ে” তথা “এ” ধ্বনি থাকবে তখন সপ্তমী।
যেমন :
কর্মে নিপুণ =কর্মনিপুণ
গাছে পাকা=গাছপাকা
দানে বীর=দানবীর
উপপদ তৎপুরুষ: ব্যাসবাক্যের শেষে “যে” থাকবে সেগুলো উপপদ তৎপুরুষ।
যেমন:
জলে চরে যে=জলচর
পকেট মারে যে=পকেটমার
সত্য বলে যে=সত্যবাদী
অলুক তৎপুরুষ: সমাস এবং ব্যাসবাক্য একই।
যেমন :
ঘোড়ার ডিম=ঘোড়ার ডিম
গায়েপড়া=গায়ে-পড়া
নঞ তৎপুরুষ: যেসব ব্যাসবাক্য “ন” বা “না” বোধক অর্থ দে।
যেমন:
নয় শুভ=অশুভ
না আচার=অনাচার
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয়: যেসব ব্যাসবাক্যের মাঝে “যাহা-তাহা”,”যিনি-তিনি”,”অথচ” অথবা বাক্যের মাঝে “যে” থাকবে তা কর্মধারয়।
যেমন:
শান্ত অথচ শিষ্ট =শান্তশিষ্ট
যিনি জজ তিনি সাহেব=জজসাহেব
মহান যে নবি=মহানবী
উপমিত কর্মধারয়
ব্যাসবাক্যের শেষে “ন্যায় ” থাকে তা উপমিত কর্মধারয়।
যেমন: পুরুষ সিংহের ন্যায়=সিংহপুরুষ
উপমান কর্মধারয়
ব্যাসবাক্যের মাঝে “ন্যায়” থাকে তা উপমান কর্মধারয়।
যেমন:
তুষারের ন্যায় শুভ্র=তুষারশূভ্র
কুসুমের ন্যায় কোমল=কুসুমকোমল
রূপক কর্মধারয়
ব্যাসবাক্যের মাঝে “রূপ” শব্দ থাকবে।
যেমন:
মন রূপ পাখি=মনপাখি
বিষাদ রূপ সিন্ধু=বিষাদসিন্ধু
বহুব্রীহি সমাস
বহুব্রীহি সমাস: ব্যাসবাক্যের শেষে “যার” বা “যে’ থাকবে সেগুলো বহুব্রীহি।
যেমন:
মহান আত্মা যার=মহাত্মা
ইতিহাস সম্পর্কিত যা=ঐতিহাসিক
ব্যতিহার বহুব্রীহি
যেসব ব্যাসবাক্যের মাঝে এক শব্দ দু’বার আসবে তা ব্যতিহার বহুব্রীহি।
যেমন:
কানে কানে যে কথা=কানাকানি
কোলে কোলে যে মিলন=কোলাকুলি
দ্বিগু সমাস
দ্বিগু সমাস: যেগুলো সংখ্যাবাচকের মত সেগুলো দ্বিগু।
যেমন:
শত অব্দের সমাহার=শতাব্দী
সাত সমুদ্রের সমাহার=সাতসমুদ্র
অব্যয়ীভাব
অব্যয়ীভাব: ব্যাসবাক্যের মাঝে “অভাব”,”সমীপে”,”সদৃশ”,”পর্যন্ত” শব্দ থাকবে সেগুলো অব্যয়ীভাব।
যেমন:
আমিষের অভাব=নিরামিষ
কুলের সমীপে=উপকূল
মরণ পর্যন্ত=আমরণ
দ্বীপের সদৃশ= উপদ্বীপ
তাছাড়াও বিশদভাবেও সবগুলো সমাস মনে রাখা যায়। আর আপনি যদি নিজের মতো করে বুঝতে আর মনে রাখতে পারেন তবে সেটাই ফলো করবেন। নিজে আরো বিস্তারিত ভাবে সমাস চেনার সহজ উপায় আলোচনা করা হলো।
সমাস চেনার সহজ উপায়
স্কুলে যখন ‘সমাস‘ পড়ানো হত, তখন স্যারেরা একটু দুষ্টুমী করেই বলতেন ‘সমাস‘ শিখতে নাকি ছয় মাস লাগে। কাজেই একদিনে শিখতে যাওয়া হবে বোকামী। ধীরে ধীরে সহজবোধ্য উপায়ে ব্রেইনে প্রবেশ করতে দিন।
দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায়
ব্যাসবাক্যে “ও / এবং / আর” থাকবে। উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। সমীকরণ : সমজাতীয় পদ + ও + সমজাতীয় পদ।
এখানে সমজাতীয় পদ মানে প্রথমটি বিশেষ্য হলে শেষেরটিও বিশেষ্যে; অনুরূপভাবে প্রথমটি বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া হলে যথাক্রমে শেষের পদটিও বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া হবে।
উদাহরণ :
- ভাই + ও + বোন = ভাই-বোন (বিশেষ্য) (বিশেষ্য)
- ভালো + ও + মন্দ = ভালো-মন্দ
- যা + ও + তা = যা-তা (সর্বনাম) (সর্বনাম)
- হেসে + ও + খেলে = হেসে-খেলে (ক্রিয়া) (ক্রিয়া)
দ্বিগু সমাস চেনার উপায়
ব্যাসবাক্যের শুরুতে সংখ্যা থাকবে এবং শেষে সমাহার কথাটি থাকবে। পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। আচ্ছা, দ্বিগু শব্দের “দ্বি” মানে কী? দ্বিতীয় শব্দে “দ্বি” আছে না? আমরা ২ বুঝাতে “দ্বি” শব্দটি ব্যবহার করি। ২ মানে কী? একটি সংখ্যা। তাহলে, যে শব্দে সংখ্যা প্রকাশ পাবে এখন থেকে সেটাকেই “দ্বিগু সমাস” বলে ধরে নিবেন।
যেমন, পরীক্ষায় আসলো শতাব্দী কোন সমাস? আচ্ছা শতাব্দী মানে হল শত অব্দের সমাহার। অর্থাৎ প্রথমেই আছে “শত ” মানে একশ, যা একটি সংখ্যা। সুতরাং এটি দ্বিগু সমাস। একইভাবে ত্রিপদী (তিন পদের সমাহার) এটিও দ্বিগু সমাস। কারণ এখানে ও একটি সংখ্যা (৩) আছে।
এবার যেকোনো ব্যাকরণ বই নিয়ে দ্বিগু সমাসের যত উদাহরণ আছে সব এই সূত্রের সাহায্যে মিলিয়ে নিন।
উদাহরণ: [সমীকরণ : সংখ্যা + বিশেষ্য + এর + সমাহার।]
- পঞ্চ(পাঁচ)+নদীর (নদী+এর)+সমাহার = পঞ্চনদ (সংখ্যা) (বিশেষ্য)
- শতাব্দী = শত অব্দের সমাহার
- ত্রিপদী = তিন পদের সমাহার
তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায়
পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। তবে এটা বিভক্তির সাথে সম্পর্কিত। সমস্তপদে যেখানে বিভক্তি লোপ পাবে সেখানেই তৎপুরুষ আসিয়া উপস্থিত হইবে। কিছু উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করছি।
উদাহরণ ১: ব্যাসবাক্যে কে, রে (সাধারণ অর্থে) থাকলে- ২য়া তৎপুরুষ।
বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন
উদাহরণ ২: ব্যাসবাক্যের মাঝে ব্যাপিয়া থাকলে- ২য়া তৎপুরুষ।
চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
উদাহরণ ৩: ব্যাসবাক্যের মাঝে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক থাকলে- ৩য়া তৎপুরুষ
পদ দ্বারা দলিত = পদদলিত
উদাহরণ ৪: ব্যাসবাক্যে কে, রে (দান/সম্প্রদানের অর্থে) থাকলে- ৪র্থী তৎপুরুষ
গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি
উদাহরণ ৫: ব্যাসবাক্যের মধ্যে নিমিত্তে, উদ্দেশ্য, জন্যে থাকলে- ৪র্থী তৎপুরুষ
উদাহরণ : আয়ের জন্য কর = আয়কর।
উদাহরণ ৬: ব্যাসবাক্যে হইতে, থেকে, চেয়ে থাকলে- ৫মী তৎপুরুষ
বৃত্ত হইতে চ্যুত = বৃন্তচ্যুত
উদাহরণ ৭: ব্যাসবাক্যে র, এর থাকলে- ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ
উদাহরণ : রাজার পুত্র = রাজপুত্র
উদাহরণ ৮: ব্যাসবাক্যে এ, য়, তে, এতে থাকলে- ৭মী তৎপুরুষ
গাছে (গাছ+এ) পাকা = গাছপাকা
উদাহরণ ৯: ব্যাসবাক্যে বিশেষ্য+ক্রিয়া+ যে / যা থাকলে – উপপদ তৎপুরুষ
ধামা + ধরে + যে = ধামাধরা (বিশেষ্য) (ক্রিয়া)
উদাহরণ ১০: ব্যাসবাক্যের শুরুতে ন, নয়, নাই থাকলে- নঞ তৎপুরুষ
ন (নাই) জানা = অজানা।
বি.দ্র. ব্যাসবাক্যের শুরুতে ন, নাই এবং ব্যাসবাক্যের শেষে যে / যার থাকলে সেটি নঞ বহুব্রীহি সমাস।
যেমন: নাই জানা যা = অজানা।
উদাহরণ ১১: ব্যাসবাক্যের বিভক্তি সমস্তপদে লোপ না পেলে- অলুক তৎপুরুষ
চোখের (চোখ+এর) বালি = চোখের বালি
অব্যয়ীভাব সমাস চেনার উপায়
ব্যাসবাক্যে সমীপে, সদৃশ, মতো, পুনঃপুনঃ (পদের দ্বিত্ব), অভাব, পর্যন্ত, অতিক্রম না করে, অধিকার করে, অতিক্রান্ত, বিরুদ্ধ, যোগ্য, ক্ষুদ্র, পশ্চাৎ, ঈষৎ, সকলেই প্রভৃতি থাকবে। উল্লেখ্য, সমস্ত পদের প্রথমে উপসর্গ (উপ, অণু, প্রতি, দূর, আ, যথা ইত্যাদি) থাকবে এবং পূর্ব পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। উপসর্গকে অব্যয়জাত শব্দাংশ বলা হয়।
উদাহরণ :
- কূলের সমীপে = উপকূল;
- বনের সদৃশ = উপবন
- পাগলা মতো = পাগলাটে;
- দিন দিন = প্রতিদিন
- ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ;
- মরণ পর্যন্ত = আমরণ
- শক্তিকে অতিক্রম না করে = যথাশক্তি
- আত্মাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম
- বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল;
- বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ
- রূপের যোগ্য = অনুরূপ;
- ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ
- গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন;
- ঈষৎ রাজি = নিমরাজি
- পামর, জনসাধারণ সকলেই = আপামর জনসাধারণ
সুতরাং সমস্ত পদের শুরুতে অব্যয় সনাক্ত করা গেলে তা অব্যয়ীভাব সমাস।
কর্মধারয় সমাস চেনার উপায়
পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। খুব বেশি আসে পরীক্ষায় এখান থেকে। কর্মধারয় সমাসে “যে /যিনি/যারা ” এই শব্দগুলো থাকবেই। যেমন: চালাকচতুর – এটি কোন সমাস? চালাকচতুর মানে ‘যে চালাক সে চতুর ‘ তাহলে এখানে ‘যে ‘ কথাটি আছে,অতএব এটি কর্মধারয় সমাস। তবে কর্মধারয় সমাস ৪ প্রকার আছে। এই ৪ প্রকার থেকেই প্রশ্ন বেশি হয়।
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
প্রথমেই আসুন, মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস চিনি। নামটা খেয়াল করুন, মধ্যপদলোপী। মানে মধ্যপদ অর্থাৎ মাঝখানের পদটা লোপ পাবে মানে চলে যাবে। সহজ করে বললে হয়, যেখানে মাঝখানের পদটা চলে যায় সেটিই মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ সিংহাসন – কোন সমাস? সিংহাসন মানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘। তাহলে দেখুন এখানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘ বাক্যটি থেকে মাঝখানের “চিহ্নিত ” শব্দটি বাদ দিলে অর্থাৎ মধ্যপদ “চিহ্নিত ” শব্দটি লোপ পেলে হয় “সিংহাসন “। যেহেতু মধ্যপদলোপ পেয়েছে, অতএব এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
উপমান কর্মধারয়
উপমান কর্মধারয় সমাস কিভাবে চিনবেন জানেন? যদি ২টি শব্দ তুলনা করা যায় তবে সেটি হবে উপমান কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ তুষারশুভ্র – কোন সমাসের উদাহরন? এটি পরীক্ষায় অনেকবার এসেছে। শব্দটি খেয়াল করুন “তুষারশুভ্র “। তুষার মানে বরফ, আর শুভ্র মানে সাদা। বরফ তো দেখতে সাদা। তাহলে তো এটি তুলনা করা যায়। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়। একইভাবে “কাজলকালো “এটিও উপমান কর্মধারয় সমাস। কারণ কাজল দেখতে তো কালো রঙেরই হয়। তার মানে তুলনা করা যাচ্ছে। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়।
এটি অন্যভাবে ও মনে রাখা যায়। উপমান মানে Noun + Adjective. যেমন তুষারশুভ্র শব্দটির তুষার মানে বরফ হল Noun, আর শুভ্র মানে সাদা হল Adjective। কাজলকালো শব্দটির কাজল হল Noun, এবং কালো হল Adjective। অতএব Noun + Adjective = উপমান কর্মধারয় সমাস।
উপমিত কর্মধারয়
উপমিত কর্মধারয় মানে যেটা তুলনা করা যাবে না। বিগত বছরের একটি প্রশ্ন ছিল: সিংহপুরুষ – কোন সমাসের উদাহরণ? খেয়াল করুন শব্দটি। সিংহপুরুষ মানে সিংহ আর পুরুষ। আচ্ছা সিংহ কি কখনো পুরুষ হতে পারে নাকি পুরুষ কখনো সিংহ হতে পারে? একটা মানুষ আর অন্যটা জন্তু, কেউ কারো মত হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
চন্দ্রমুখ শব্দটি কোন সমাস? খেয়াল করুন মুখ কি কখনো চাঁদের মত হতে পারে, নাকি চাঁদ কখনো মুখের মত হতে পারে? কোনোটাই কোনটার মত হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
এটিও অন্যভাবে মনে রাখা যায়। উপমিত মানে Noun+ Noun. যেমন -পুরুষসিংহ শব্দটির পুরুষ ও সিংহ দুটোই Noun। অর্থাৎ Noun+ Noun। একইভাবে চন্দ্রমুখ শব্দটির চন্দ্র ও মুখ দুটিই Noun । অর্থাৎ Noun+ Noun। অতএব । অর্থাৎ Noun+ Noun= উপমিত কর্মধারয় সমাস
রুপক কর্মধারয়
বাকি থাকল রুপক কর্মধারয় সমাস। এটিও খুব সোজা। রুপ- কথাটি থাকলেই রুপক কর্মধারয়। যেমনঃ বিষাদসিন্ধু -এটি কোন সমাস? বিষাদসিন্ধু কে বিশ্লেষণ করলে হয় “বিষাদ রুপ সিন্ধু “। যেহেতু এখানে রুপ কথাটি আছে, অতএব এটি রুপক কর্মধারয় সমাস। একইভাবে মনমাঝি -মনরুপ মাঝি, ক্রোধানল -ক্রোধ রুপ অনল, এগুলো ও রুপক কর্মধারয় সমাস, যেহেতু রুপ কথাটা আছে।
বহুব্রীহি সমাস চেনার উপায়
অন্য / ভিন্ন পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। এখানে সবসময়ই তৃতীয় অর্থ প্রকাশ পাবে। ব্যাসবাক্যে বিশেষণ + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে, তা বহুব্রীহি সমাস।
উদাহরণ ১: ব্যাসবাক্যে বিশেষণ + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে –
নীল + কণ্ঠ + যার = নীলকণ্ঠ (বিশেষণ) (বিশেষ্য)
উদাহরণ ২: ব্যাসবাক্যে বিশেষ্য + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে-
আশীতে (দাঁতে) + বিষ + যার = আশীবিষ (সাপের বিষ দাঁত)
উদাহরণ ৩: ব্যাসবাক্যে একই বিশেষ্য দুবার পাশাপাশি বসবে + যে + বিশেষ্য থাকলে-
কানে কানে + যে + কথা = কানাকানি
উদাহরণ ৪: (একই বিশেষ্য পদ) (বিশেষ্য) ব্যাসবাক্যের মধ্যে ‘সহিত’ কথাটি থাকলে-
স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক
উদাহরণ ৫: ব্যাসবাক্যে নাই / নয় + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে-
নাই + তার + যার = বেতার
উদাহরণ ৬: ব্যাসবাক্যে সংখ্যা + বিশেষ্য + যার থাকলে-
সে (তিন) + তার + যার = সেতার
উল্লেখ্য, অনেকেই ‘সেতার’ শব্দটিকে দ্বিগু সমাস মনে করে এভাবে ব্যাসবাক্য করতে চান- সে (তিন) তারের সমাহার = সেতার। কিন্তু ‘সেতার’ বলতে শুধু তিনটি তারকে বুঝায় না; এটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্রকে বুঝায়- যার তিন তার রয়েছে। অর্থাৎ এটি অন্য অর্থে / ভিন্ন পদের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এটিকে দ্বিগু সমাসে না করে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসের নিয়মে করলে ভালো হবে।
শেষ কথা
বাংলা ব্যাকরণ এর নিয়মানুসারে ব্যাকরণ বুঝতে গেলে বিসিএস বা অন্য কোন চাকরির জন্য আর প্রস্তুতি নেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ বইতে যে ভাষায় ব্যাখ্যা করা আছে তা বুঝা অত্যন্ত কষ্টকর। তাই চেষ্টা করলাম সহজ ভাষায়, সমাস চেনার উপায় উপস্থাপন করতে।
পোস্ট কৃতজ্ঞতাঃ https://www.facebook.com/100057478028974/posts/2294372220804741/