Birth Certificate

Birth Certificate বা জন্ম নিবন্ধন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (2024)

Birth Certificate বা জন্ম নিবন্ধন হলো, একজন মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, আমাদের দেশে বর্তমানে ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ও জন্ম সনদ তৈরি করা হয়েছে ১৫ কোটি মানুষের। অর্থাৎ এখনও প্রায় এক কোটি মানুষের এটি করা হয়নি। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা ও সতর্ক হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একান্ত জরুরী। তাই আমরা নিয়ে এসেছি এই ব্লগটি, যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন জন্ম নিবন্ধন কি, জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম, জন্ম নিবন্ধন ফি, জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে ও জন্ম সনদ তৈরি করার প্রক্রিয়া।

Birth Certificate
Birth Certificate

Table of Contents

জন্ম নিবন্ধন কি?

জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান এবং জন্ম সনদ প্রদান করা। কিন্তু কেন জন্ম সনদ তৈরি করবেন? জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগে? পরের অংশে থাকছে এই প্রশ্নের উত্তর।

জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগে 

জন্ম সনদ একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে কিছু ক্ষেত্রে জন্ম সনদ প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। জন্ম নিবন্ধন কী কী কাজে লাগে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

  • ১) পাসপোর্ট ইস্যু
  • ২) বিবাহ নিবন্ধন
  • ৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
  • ৪) সরকারী, বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান
  • ৫) ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
  • ৬) ভোটার তালিকা প্রণয়ন
  • ৭) জমি রেজিষ্ট্রেশন
  • ৮) ব্যাংক হিসাব খোলা
  • ৯) আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি
  • ১০) গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
  • ১১) ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি
  • ১২) ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি
  • ১৩) বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি
  • ১৪) গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি
  • ১৫) ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি
  • ১৬) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি

জন্ম সনদ তৈরি না করলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়

 ক্ষেত্রজন্ম সনদ তৈরি না করার সমস্যা
স্কুলে ভর্তিবর্তমানে স্কুলগুলোতে ভর্তির সময় বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ চাওয়া হয়। অনেক সময় জন্ম সনদ না থাকার কারণে মেধা থাকা সত্ত্বেও ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় না।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিজন্ম সনদ না থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করা যায় না। ফলে ভোটাধিকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন নাগরিক সুজোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। 
পাসপোর্ট তৈরিপড়াশোনা, জীবিকা, ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যেতে প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের। পাসপোর্টের আবেদন ফরমের সাথে জন্ম সনদ অথবা জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হয়। জন্ম সনদ না থাকলে জতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায় না, সুতরাং পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করা যায় না।
সরকারী চাকরি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরিসরকারী চাকরি বা স্বায়ত্তশাসিত চাকরির ক্ষেত্রেও বর্তমানে জন্ম সনদ প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে জন্ম সনদ না থাকলে মেধা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি হাতছাড়া হয়ে যায়।
বিয়ের নিবন্ধনবিয়ের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জন্ম সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিয়ের সময় বয়স প্রমাণের জন্য এটি ভূমিকা পালন করে। তাই এটি ব্যতীত বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে।
সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের পর রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্ম সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। এই সনদ না থাকলে এক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
বয়স প্রমাণের জন্যঅনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে শিশুরা নানা ধরনের কিশোর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এক্ষেত্রে বিচার শুরু করার আগে বা শাস্তি প্রদানের আগে তার বয়স প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এজন্য জন্ম সনদ মূল ভূমিকা পালন করে।

জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

জন্ম সনদ তৈরি করার নিয়ম হলো নির্ধারিত আবেদন ফর্ম পূরণ করে নিবন্ধকের নিকট কিছু দলিল বা প্রত্যয়নসহ গিয়ে আবেদন করা। এছাড়া অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যাবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কি কি লাগে:

শিশুর বয়স ০ থেকে ৪৫ দিন হলে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

  • শিশুর পিতা-মাতার জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি)।
  • সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর (শিশুর) ১ পাসপোর্ট সাইজ কপি ছবি।

শিশুর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হলে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

  • ইপিআই কার্ড (টিকা কার্ড) -এর সত্যায়িত ফটোকপি অথবা ইপিআই কর্মীর প্রত্যয়নপত্র।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি
  • শিশুর পিতা-মাতার জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি)।
  • আবেদনকারীর (শিশুর) ১ পাসপোর্ট সাইজ কপি ছবি।

বয়স ৫ বছরের বেশি হলে জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

  • উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র, অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, অর্থাৎ পি.এস.সি/জে.এস.সি/এস.এস.সি অনুরূপ পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি
  • পিতা-মাতার জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন (বাংলা ও ইংরেজি)।
  • আবেদনকারীর ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

জন্ম তথ্য প্রদানকারী কারা?

জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন।

এছাড়া যারা কোনো ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের নিকট তথ্য প্রেরণ করতে পারবেন:

  • ১) ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সচিব;
  • ২) গ্রাম পুলিশ;
  • ৩) সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর;
  •  ৪) ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী;
  • ৫) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী;
  • ৬) কোনো সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা;
  • ৭) নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী;
  • ৮) জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
  • ৯) পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা;

জন্ম নিবন্ধন কোথায় করবেন?

জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তির জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমানে বসবাস করছেন এমন যেকোনো স্থানের নিবন্ধকের কাছে জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা নিবন্ধক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন:

  • ১) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য;
  • ২) পৌরসভার মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর;
  • ৩) সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর;
  • ৪) ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা; ও
  • ৫) বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসারগণ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসমূহে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রধান কার্যালয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে পুরাতন পৌরসভা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ জন্ম নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

আপনি কিন্তু এখন চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু আমাদের অনেকেরই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে ধারনা না থাকায় আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। আপনারা যাতে কয়েক ক্লিকেই জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন, সেজন্য অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম -গুলো তুলে ধরা হলো:

ধাপ ১: অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরি করতে প্রথমেই যেকোনো ব্রাউজার থেকে https://bdris.gov.bd/br/application ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। সেখানেই নতুন জন্ম নিবন্ধনের অপশন পেয়ে যাবেন। এরপরের অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম -গুলো খুবই সহজ। 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

ধাপ ২: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনি কোন এলাকার কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে চান তা নির্বাচন করুন। সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার বর্তমান ঠিকানা অথবা স্থায়ী ঠিকানা বাছাই করতে পারবেন। আপনার জন্ম দেশের বাইরে হলে বাংলাদেশের দূতাবাস নির্বাচন করুন। এইসব নির্বাচিত এলাকার কার্যালয় থেকেই আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। 

ধাপ ৩: এরপর আপনাকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। 

  • ফরমের প্রথমে আবেদনকারীর নামের দুটি অংশ ইংরেজিতে ও বাংলায় দুইভাবেই লিখতে হবে। ইংরেজিতে লেখার সময় অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন নামের দুটি অংশ আলাদা আলাদা লিখতে হবে। তবে আপনার নামের যদি একটি অংশই থাকে, যেমন আলিফ, তাহলে ১ম অংশ বাদ দিয়ে দ্বিতীয় অংশে নামটি লিখুন। 
  • স্টার মার্কগুলো অবশ্যই লিখতে হবে। 
  • তারপর নিবন্ধনকারীর জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
  • জন্মতারিখের পরের ঘর দুটিতে যথাক্রমে নিবন্ধনকারীর পিতামাতার কত তম সন্তান সেটি এবং নিবন্ধনকারীর লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। 
  • তারপর নিবন্ধনকারী শিশুর জন্মস্থানের ঠিকানা লিখতে হবে।

এই ঘরগুলো পূরণ করা শেষ হলে নিচের ডানদিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

ধাপ ৪: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার জন্য এরপর আরেকটি ফরমে এই বিষয়গুলো পূরণ করতে হবে:

ফরমের প্রথম ঘরে নিবন্ধনকারীর পিতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর লিখতে হবে। এর পরের ঘর দুটিতে নিবন্ধনকারীর পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জাতীয়তা উল্লেখ করতে হবে। 

একইভাবে মাতার তথ্যও পূরণ করতে হবে। 

তারপর ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

ধাপ ৫: এরপর আপনাকে আপনার ঠিকানা দিতে হবে। প্রথমেই “আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?” অপশন থেকে কোনোটিই নয় বাছাই করলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠা সামনে চলে আসবে। আপনার জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা এক হলে চেক বক্সে টিক দিন। অন্যথায় আলাদা করে লিখুন। একইভাবে বর্তমান ঠিকানার ঘর পূরণ করুন৷ 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

ধাপ ৬: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করার জন্য পরের পৃষ্ঠায় আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। এখানে আবেদনকারীর সাথে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর, ইমেইল জমা দিতে হবে। নিবন্ধনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয় তাহলে তিনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন। 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

ধাপ ৭: সকল তথ্য নির্ভুলভাবে দিলে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়মগুলো ধাপ ৭ এর আগ পর্যন্ত ভালোভাবে মেনে চললে আর কোনো সমস্যায় পড়ার কথাও না! তথ্যগুলো জমা দেওয়ার পর আপনাকে একবার দেখানো হবে। তথ্যগুলো ভালোমতো যাচাই করে নিন। ভুল থাকলে সংশোধন করে ফেলুন। তারপর আপনাকে ইপিআই টিকার কার্ড এর সত্যায়িত কপি এবং জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য পিতা/মাতা/পিতামহ/পিতামহীর দ্বারা স্বনামে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঘোষিত আবাসস্থলের বিপরীতে হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমাণপত্র সংযোজন করতে হবে। 

এরপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। 

জন্ম সনদ তৈরি

ধাপ ৮: জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ঠিকভাবে সাবমিট করা হয়ে গেলে আপনাকে একটি আবেদন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বর দিয়ে সহজেই জন্ম নিবন্ধনের অবস্থা জানতে পারবেন। এই পৃষ্ঠার “আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন” বাটনটিতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিন। এই তো জেনে নিলেন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম -গুলো!

জন্ম সনদ তৈরি

ধাপ ৯: আবেদন করার ১৫ দিন পর প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং আবেদনপত্রটির প্রিন্ট কপি নিয়ে স্থানীয় নির্দিষ্ট কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। এগুলো জমা দেওয়ার পর জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটটি পেয়ে যাবেন।

ব্যস, এই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম -গুলো মেনে চললেই আপনার কাজ অনেকটুকু সহজ হয়ে যাবে।

জন্ম নিবন্ধন ফি

শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। শিশু জন্মের ২ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন না করালে বাবা-মায়ের জন্য জরিমানা আছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনরকম ফি ছাড়া জন্ম নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়া হয়। এ সময় বাড়ানো হয়েছিল ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে দেশের অধিকাংশ শিশু জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। জুনের পর জন্মনিবন্ধনের জন্য সরকার একটি ফি ধার্য করেছে। জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্তৃক নির্ধারিত জন্ম নিবন্ধন ফি এর তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

জন্ম নিবন্ধন ফি এর তালিকা
আবেদনকারীর বয়সজন্ম নিবন্ধন ফি
আবেদনকারীর বয়স ৪৫ দিনের কম হলেফ্রি / বিনামূল্যে
আবেদনকারীর বয়স ৪৫ দিনের বেশি হলেপ্রতি এক বছর বয়সের জন্য ১০ টাকা হারে ফি নেওয়া হয়।
অর্থাৎ, আবেদনকারীর বয়স ১ বছর হলে জন্ম নিবন্ধন ফি (১*১০) = ১০ টাকা।আবেদনকারীর বয়স ২ বছর হলে জন্ম নিবন্ধন ফি (২*১০) = ২০ টাকা।আবেদনকারীর বয়স ৫ বছর হলে জন্ম নিবন্ধন ফি (৫*১০) = ৫০ টাকা।আবেদনকারীর বয়স ১০ বছর হলে জন্ম নিবন্ধন ফি (১০*১০) = ১০০ টাকা।….

জন্ম সনদ তৈরি সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: বিদেশে জন্ম হলে দেশে জন্ম সনদ তৈরি করা যাবে কি?

উত্তর: জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের ধারা-৪ অনুসারে নিবন্ধকের কার্যালয়ের অধীনে জন্ম গ্রহণকারী বা মৃত্যু বরণকারী অথবা স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করা যায়। সুতরাং বিদেশে জন্ম গ্রহণ/মৃত্যু বরণকারী বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে বিদেশে জন্ম বা মৃত্যুর যথাযথ প্রমাণ দাখিল করে দেশে স্থায়ী ঠিকানায় নিবন্ধকের নিকট হতে জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারবেন।

প্রশ্ন: একই ব্যক্তি একাধিকবার জন্ম সনদ তৈরি করতে পারবে কি?

উত্তর: জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী একই ব্যক্তির অনুকূলে একাধিকবার জন্ম সনদ তৈরি করা যাবে না। এটি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর ২১ ধারা অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ।

প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা কীভাবে পরীক্ষা করবে?

জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

উত্তর: অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করা থাকলে এই লিংকে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

প্রশ্ন: জন্ম নিবন্ধন ১৭ ডিজিট করার নিয়ম কি? ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?

উত্তর: জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী ১৭ ডিজিটের কম ব্যপন নম্বর হলে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয়ে পুরাতন সনদ জমা প্রদান করে ১৭ ডিজিট ব্যপন নম্বর সম্বলিত সনদ নেয়া যাবে।

প্রশ্ন: পাসওর্য়াড প্রদান করেও প্রবেশ করা না গেলে কী করতে হবে?

উত্তর: পাসওয়ার্ড প্রদান করার সময় ইংরেজী কী বোর্ড ব্যবহার করতে হবে। যদি বাংলা Unicode Keyboard (যেমন Avro Keyboard) Active থাকে তবে সেটা বন্ধ করে Password প্রদান করে প্রবেশ করতে হবে। অথবা কম্পিউটার Restart করে প্রবেশ করতে হবে।

প্রশ্ন: হাতে লিখা পুরাতন বহি হতে অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করতে কি নতুন জন্ম নিবন্ধন অপশনে প্রবেশ করতে হবে?

উত্তর: হাতে লিখা পুরাতন বহি হতে ডাটা এন্ট্রি করার সময় “নতুন জন্ম নিবন্ধন” অপশনে প্রবেশ করতে হবে না। অনলাইনে তৈরীকৃত সংশ্লিষ্ট পুরাতন বইসমূহে প্রবেশ করে ডাটা এন্ট্রি করতে হবে। কেবলমাত্র নতুন জন্ম সনদ তৈরি -এর ক্ষেত্রে টুল বক্সে উল্লিখিত “নতুন জন্ম নিবন্ধন” অপশনে প্রবেশ করে এন্ট্রি করতে হবে।

প্রশ্ন: সনদ অপশনে ক্লিক করার পরেও সনদ না এলে কী করতে হবে?

উত্তর: জন্ম ও মৃত্যু সনদ PDF Format-এ Open হয়। সুতরাং Adobe Reader Software কম্পিউটারে না থাকলে Install করতে হবে।

প্রশ্ন: অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলা লেখা না হলে কী করতে হবে?

উত্তর: অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলা লেখার সময় বাংলা Unicode Software (যেমন Avro Keyboard) ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং কম্পিউটারে বাংলা ইউনিকোড Software না থাকলে Install করে নিতে হবে।

প্রশ্ন: বিবাহিত নারীর জন্ম নিবন্ধন-এ স্বামীর নাম লিখা যাবে কি বা তার স্থায়ী ঠিকানা কীভাবে লিখতে হবে?

উত্তর: জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী যে কোন জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পিতা ও মাতার নাম লিখতে হবে। কোন অবস্থাতে স্বামীর নাম লেখার সুযোগ নাই। বিবাহিত মহিলার স্থায়ী ঠিকানা বিবাহের পূর্বে যে ঠিকানা ছিল সেটি লিখতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলা ও ইংরেজী সনদ একসাথে প্রদান করা যাবে কি না?

উত্তর: বাংলা ও ইংরেজী সনদ একসাথে প্রদান করা যাবে। প্রয়োজনে কাগজের একপিঠে বাংলা ও অপরপিঠে ইংরেজী সনদ প্রদান করা যাবে।

প্রশ্ন: জন্ম তথ্য সংশোধনের নিয়ম কী ?

উত্তর: আইনের ১৫ ধারায় বর্ণিত বিধানসমূহ অনুসরণপূর্বক নিদিষ্ট ফরম পূরণ করে রেজিস্ট্রার জেনারেল অথবা তার পক্ষে অন্য কোন ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিকট হইতে কারিগরী সহায়তা গ্রহণ করিয়া জন্ম ও মৃত্যু তথ্য সংশোধন করা যাবে।

প্রশ্ন: একই সনদ ২য় বার ইস্যু করা হলে নিবন্ধক কোন তারিখে সনদ এ স্বাক্ষর করবে?

উত্তর: জন্ম সনদ একাধিক বার ইস্যূ করা হলে সনদ প্রদানের তারিখ ১ম বার জন্ম সনদ তৈরি করার তারিখ থাকবে। পরবর্তিতে নিবন্ধক একই সনদ পূনরায় ইস্যূ করলে যে তারিখে সনদ প্রিন্ট করা হয়েছে সেই তারিখে সনদে স্বাক্ষর করবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Table of Contents

Index

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.