গুরুত্বপূর্ণ ১০০ বাগধারা (অর্থ ও উদাহরণসহ)

বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ১০০ বাগধারা অর্থ ও উদাহরণসহ জানুন। শিক্ষার্থী ও বিসিএস প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বাগধারার তালিকা ও ব্যাখ্যা।
বাগধারা কী?
বাগধারা হলো এমন কিছু স্থায়ী শব্দগুচ্ছ যা আক্ষরিক অর্থ না নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রূপক বা প্রাঞ্জল অর্থ প্রকাশ করে। যেমন – “ঘোড়ার ডিম” বলতে কোনো মূল্যহীন বা বাজে জিনিস বোঝায়। এই পোস্টে আমরা এমন ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা উপস্থাপন করেছি অর্থ ও উদাহরণসহ, যা শিক্ষার্থী, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং ভাষার সৌন্দর্য বোঝার জন্য অপরিহার্য।
বাগধারা অর্থ কি
বাক্যের বর্গ যখন বাচ্যার্থ বা আক্ষরিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ কোনো অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাগধারা বলে। বাগধারার প্রয়োগে ভাষা প্রাণবন্ত হয় এবং বাক্য অধিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে পারে। বাগধারা যেহেতু আক্ষরিক অর্থ ধারণ করে না, সেহেতু বাগধারা ঠিক কী অর্থ প্রকাশ করে ভাষা-ব্যবহারকারীকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়।
বাগধারা শব্দের অর্থ কথা বলার “বিশেষ ঢং বা রীতি”। এটা এক ধরনের গভীর ভাব ও অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। বাগধারা বা বাগ্বিধি কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছের বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। সাধারণ অর্থের বাইরে যা বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশকরে থাকে তাঁকে বাগ্বিধি বা বাগ্ধারা বলে।
নিচে প্রচলিত কিছু বাগধারার প্রয়োগ-উদাহরণ দেওয়া হলো।
গুরুত্বপূর্ণ ১০০ বাগধারা
- অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া): খারাপ লোকটা আরো আগেই অক্কা পেতে পারত।
- অক্ষরে অক্ষরে (যথাযথ): দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাই।
- অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যের খেলা): যানজট অদৃষ্টের পরিহাস নয়, মানুষেরই তৈরি।
- অনধিকার চর্চা (অপরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ): অনধিকার চর্চা তার রোগ, সব কিছুতেই কথা বলা চাই।
- অন্ধকার দেখা (দিশেহারা হয়ে পড়া): কাজের চাপে চারদিকে অন্ধকার দেখছি।
- অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন): ছেলেটাই ছিল বিধবার অন্ধের যষ্টি।
- অমাবস্যার চাঁদ (দুর্লভ বস্তু): তোমার দেখাই পাই না আজকাল, একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেলে!
- অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল অনুনয়): কৃপণ লোকের কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন করা একই কথা।
- অর্ধচন্দ্র (ঘাড় ধাক্কা দেয়া): চাইলাম চাঁদা, পেলাম অর্ধচন্দ্র!
- আঁতে ঘা (খুব কষ্ট): তোমার প্রতিবেদনে ওইসব লোকের আঁতে ঘা লেগেছে।
- আকাশ কুসুম (অসম্ভব কল্পনা): অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভের আশা! আকাশ কুসুম চিন্তা ছাড়া কিছু নয়।
- আগুন নিয়ে খেলা (বিপজ্জনক ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করা): তুমি আমার সাথে আগুন নিয়ে খেলতে এসো না।
- আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ বড়োলোক হওয়া): আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তো, তাই কথাবার্তার ধরন বদলে গেছে।
- আঠারো মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রিতা): সাত দিনের মধ্যে ও করবে এই কাজ। ওর তো আঠারো মাসে বছর।
- আদা-জল খেয়ে লাগা (প্রাণপণ চেষ্টা করা): এতদিন কাজটা ফেলে রেখেছিলে, এবার আদা-জল খেয়ে লেগে দেখো শেষ করতে পারো কিনা।
- আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ): তার মতো আমড়া কাঠের ঢেঁকি লাখে একটা মেলে।
- আষাঢ়ে গল্প (আজগুবি গল্প): বর্ষাকালে আষাঢ়ে গল্প না হলে কি আসর জমে?
- ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ব): ইঁচড়ে পাকা ছেলেমেয়েদের দিয়ে এমন কাজ করানো কঠিন।
- ইতর বিশেষ (পার্থক্য): দুজনের কাজের মাঝে অনেক ইতর বিশেষ আছে।
- উড়নচণ্ডী (বেহিসেবি): যেমন উড়নচণ্ডী মেয়ে তেমন উড়নচণ্ডী জামাই।
- উড়ে এসে জুড়ে বসা (অপ্রত্যাশিতভাবে জায়গা দখল করা): উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকের মুখে অনধিকার চর্চার উপদেশ মানায় না।
- উড়োকথা (গুজব): উড়োকথায় কান দিয়ো না।
- উড়োচিঠি (বেনামি চিঠি): এমন উড়োচিঠির উপর ভিত্তি করে তদন্ত করা ঠিক হবে না।
- উত্তম-মধ্যম (বেদম প্রহার): সব চোরের কপালেই উত্তম-মধ্যম লেখা থাকে, তা থেকে রেহাই নেই।
- উনিশ-বিশ (সামান্য পার্থক্য): বইটির প্রথম সংস্করণ আর দ্বিতীয় সংস্করণে পার্থক্য উনিশ-বিশ।
- এককথার মানুষ (দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি): আমি এককথার মানুষ; বলেছি যখন, করেই দেখাব।
- এক ঢিলে দুই পাখি (এক প্রচেষ্টায় দুই ফল): বুঝেছি, তুমি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাও।
- এলাহি কাণ্ড (বিরাট আয়োজন): এমন এলাহি কাণ্ড করে বসেছ। অথচ কিনা সামান্য জন্মদিনের অনুষ্ঠান।
- এসপার ওসপার (চূড়ান্ত মীমাংসা): আজ ওর সঙ্গে এসপার ওসপার করে তবেই ঘরে ফিরব।
- ওজন বুঝে চলা (আত্মসম্মান রক্ষা করা): নিজের ওজন বুঝে চললে এরকম সম্মানহানি হতো না।
- কচুকাটা করা (ধ্বংস করা); ওর সাথে লাগতে যেও না, কচুকাটা করে ছাড়বে।
- কড়ায় গন্ডায় (চুলচেরা হিসাব): হিসাবের খাতায় সব লিখে রেখেছি, সময়মতো কড়ায় গন্ডায় আদায় করা যাবে।
- কথার কথা (গুরুত্বহীন কথা): এটা একেবারেই কথার কথা, মানতেই হবে এমন নয়।
- কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ): বহু কাল দুঃখে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত তার কপাল ফিরল।
- কলমের এক খোঁচা (লিখিত আদেশ): কলমের এক খোঁচায় দুর্বৃত্তদের চাকরি চলে গেল।
- কলুর বলদ (একটানা খাটুনি): মা সারাজীবন সংসারে কলুর বলদের মতো খেটেই গেলেন।
- কাঁচা পয়সা (নগদ উপার্জন): উঠতি ধনীদের কাঁচা পয়সার গরমে বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ছে।
- কাগজে কলমে (লিখিতভাবে): কাগজে-কলমে সব প্রমাণ রয়েছে।
- কাছাঢিলা (অসাবধান): এমন কাছাঢিলা লোক দিয়ে দারোয়ানের কাজ হবে না।
- কাঠখোট্টা (নীরস ও অনমনীয়): এমন কাঠখোট্টা লোককে দিয়ে রাজনীতি হয় না।
- কানকাটা (নির্লজ্জ): তার মতো কানকাটা লোক এমন মিষ্টি গালিতে অপমান বোধ করে না।
- কান খাড়া করা (ওত পেতে থাকা): সাবধানে কথা বলো, আশেপাশে কেউ হয়তো কান খাড়া করে আছে।
- কান ভাঙানো (কুপরামর্শ): ও নিশ্চয় আমার নামে কান ভাঙিয়েছে। আর তুমিও তা বিশ্বাস করে বসে আছ।
- কিস্তিমাত করা (সফলতা লাভ): সবচেয়ে বড়ো পুরস্কারটা পেয়ে সে একেবারে কিস্তিমাত করেছে।
- কুয়োর ব্যাঙ (সংকীর্ণমনা লোক): ও রকম কুয়োর ব্যাঙ দিয়ে নতুন কিছু করা যাবে না।
- কৈ মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না): শত প্রতিকূল পরিবেশেও এরা কৈ মাছের প্রাণ হয়ে বাঁচে।
- কোমর বাঁধা (দৃঢ় সংকল্প): কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়ো, সফলতা আসবেই।
- খয়ের খাঁ (চাটুকার): খয়ের খাঁ থেকে একটু সাবধান থেকো।
- খেজুরে আলাপ (অকাজের কথা): কাজের সময়ে খেজুরে আলাপ করতে ভালো লাগে না।
- গড্ডলিকা প্রবাহ (অন্ধ অনুকরণ): গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে পথ চলতে শেখো।
- গভীর জলের মাছ (খুব চালাক): ওর মতো গভীর জলের মাছকে নাগালে আনা কঠিন।
- গরম গরম (তৎক্ষণাৎ): সাংবাদিকরা গরম গরম খবর পেলে খুব খুশি হয়।
- গা ঢাকা দেওয়া (পলায়ন করা): কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে এখন সে গা ঢাকা দিয়েছে।
- গায়ে পড়া (অযাচিত): গায়ে পড়ে কোনো কাজ করতে যেও না বাপু।
- গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো (ফাঁকির মনোভাব): গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো যার স্বভাব, তাকেও দলে রাখতে হলো।
- গুড়ে বালি (আশায় নৈরাশ্য): ঝড়ের কারণে আম ব্যবসায়ীদের লাভের আশা এবার গুড়ে বালি।
- গোঁফ খেজুরে (খুব অলস): গোঁফ খেজুরে লোককে দিয়ে এসব কাজ হবে না।
- গোড়ায় গলদ (শুরুতেই ভুল): গোড়ায় গলদ করলে হিসাব মিলবে কী করে?
- গোল্লায় যাওয়া (নষ্ট হওয়া): সৎ সঙ্গে মিশলে গোল্লায় যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
- ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া (মধ্যবর্তীকে অতিক্রম করে কাজ করা): দাপ্তরিক কাজে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে যেয়ো না, বিপদে পড়বে।
- ঘোড়ার ডিম (কিছুই না): আস্ফালন কোরো না, তুমি আমার ঘোড়ার ডিম করতে পারবে।
- চশমখোর (বেহায়া): এমন চশমখোর লোকের সাথে আমি মিশি না।
- চিনির বলদের মতো ঘানি টানা (ফল লাভে অংশীদার না হওয়া): সারাজীবন চিনির বলদের মতো ঘানি টানলে, বিনিময়ে কিছুই পেলে না।
- চিনে জোঁক (নাছোড়বান্দা): লোকটি এ কাজ পাওয়ার জন্য একেবারে চিনে জোঁকের মতো লেগে আছে।
- চুনোপুঁটি (সামান্য ব্যক্তি): সকলকে চুনোপুঁটি ভেবে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
- চুলোয় যাওয়া (নষ্ট হওয়া): ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এমন পরিশ্রমের কাজটা শেষ পর্যন্ত চুলোয় গেল।
- চোখ পাকানো (রাগ দেখানো): আমার দিকে এমন চোখ পাকানোর কারণ কী?
- চোখ বুজে থাকা (ভূমিকা না রাখা): প্রতিবেশীর বিপদে চোখ বুজে থাকতে নেই।
- চোখে সরষে ফুল দেখা (বিপদে দিশেহারা হওয়া): পরীক্ষা সামনে, তাই চোখে সরষে ফুল তো দেখবেই।
- ছা-পোষা (অত্যন্ত গরিব): ছা-পোষা লোক আমি, দেশ নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
- ছেলের হাতের মোয়া (সহজলভ্য): সবকিছু ছেলের হাতের মোয়া ভেবো না।
- জগাখিচুড়ি (বিশৃঙ্খল): সবকিছু জগাখিচুড়ি করে রেখেছ দেখছি!
- জিলাপির প্যাঁচ (কূটবুদ্ধি): বাইরে থেকে দেখতে সরল হলেও লোকটির অন্তরে জিলাপির প্যাঁচ।
- ঝোপ বুঝে কোপ মারা (অবস্থা বুঝে সুযোগ গ্রহণ): তিনি ঝোপ বুঝে কোপ মেরে সফল হয়েছেন।
- টইটম্বুর (ভরপুর): বৃষ্টির পানিতে পুকুরটা একেবারে টইটম্বুর হয়ে আছে।
- টনক নড়া (সজাগ হওয়া): আগে কথা বললে না, এতক্ষণে তোমার টনক নড়ল?
- টাকার গরম (বিত্তের অহংকার): সব সময়ে টাকার গরম দেখানো ঠিক নয়।
- ঠোঁট কাটা (বেহায়া): আজকাল ঠোঁটকাটা লোকের অভাব নেই।
- ডান হাতের ব্যাপার (খাওয়া): আগে ডান হাতের ব্যাপারটা সেরে নেই, পরে অন্য কথা।
- ডুব মারা (পালিয়ে যাওয়া): যেই আমি বিপদে পড়লাম, অমনি তোমরা সবাই ডুব মারলে।
- ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু): তুমি দেখি একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছ।
- তালকানা (কাণ্ডজ্ঞানহীন): এমন তালকানা লোকের সাথে চলা যায় না।
- তালপাতার সেপাই (ছিপছিপে): শরীরের প্রতি যত্ন নাও, দিন দিন তুমি তো তালপাতার সেপাই হয়ে যাচ্ছ।
- তাসের ঘর (স্বল্পস্থায়ী): বাবার চাকরি যাওয়ায় মায়ের সব স্বপ্ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল।
- তিলকে তাল করা (ছোটোকে বড়ো করা): তিলকে তাল করা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
- তীর্থের কাক (সুযোগ সন্ধানী): শরণার্থীরা রিলিফের চালের জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে আছে।
- তেল মাখানো (তোশামোদ): সাহেবকে তেল মাখানোর লোকের অভাব নেই।
- থতমত খাওয়া (অপ্রস্তুত হয়ে পড়া): ক্লাসে হঠাৎ নতুন শিক্ষক দেখে সবাই থতমত খেয়ে গেলাম।
- দা-কুমড়া সম্পর্ক (শত্রুতা): বাপ-চাচাদের দা-কুমড়া সম্পর্ক এখন চাচাতো ভাইদের মধ্যে টিকে আছে।
- দিবাস্বপ্ন (অলীক কল্পনা): দিবাস্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে না এমন লোক মেলা ভার।
- দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু): সুযোগসন্ধানীরা সব সময়ে দুধের মাছির মতো ক্ষমতার আশপাশে ঘোরে।
- ধরাকে সরা জ্ঞান (অহংকার করা): তুমি ধরাকে সরা জ্ঞান করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছ!
- ননীর পুতুল (শ্রমবিমুখ): ছেলেটাকে একেবারে ননীর পুতুল বানিয়ে রেখেছে, কোনো কাজ করতে দেয় না।
- নয়-ছয় (অপব্যবহার): তুমি নয়-ছয় করে টাকাগুলো শেষ কোরো না।
- পটল তোলা (মারা যাওয়া): আজ বাদে কাল পটল তুলবে, অথচ তার মিথ্যাচার গেল না।
- পুঁটি মাছের প্রাণ (ছোটো মন): পুঁটি মাছের প্রাণ নিয়ে নেতা হওয়া যায় না।
- বইয়ের পোকা (সব সময়ে বই পড়ে এমন): পরিচিত লোকদের কাছে বইয়ের পোকা হিসেবে তার নাম আছে।
- বর্ণচোরা (ভণ্ড): বর্ণচোরা লোকেরা খুব সহজেই অন্যদের বিপদে ফেলে।
- বাঘের দুধ (অসম্ভব বস্তু): টাকায় কী না হয়? বাঘের দুধ মেলে।
- বিনা মেঘে বজ্রপাত (অপ্রত্যাশিত বিপদ): সন্তানের মৃত্যুসংবাদ তার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।
- বুদ্ধির ঢেঁকি (নির্বোধ): তোমার বিবেচনার বলিহারি, অমন বুদ্ধির ঢেঁকির কাছে গেছ বুদ্ধি নিতে!
- ভরাডুবি (সর্বনাশ): ব্যাবসা তো ভালোই গুছিয়েছিলে, এমন ভরাডুবি হলো কীভাবে?
- ভিজে বিড়াল (কপট ব্যক্তি): সাবধান, আমাদের চারদিকে ভিজে বিড়ালের অভাব নেই।
- ভিটায় ঘুঘু চরানো (নিঃস্ব করা): ও হুমকি দিয়ে বলেছে, আমার ভিটায় নাকি ঘুঘু চরাবে।
- ভুঁইফোঁড় (নতুন আগমন): ভুঁইফোঁড় সাংবাদিকদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকের সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
- মগের মুল্লক (অরাজকতা): দেশ তো আর মগের মুল্লুক হয়ে যায়নি যে, এমন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাবে।
- মণিকাঞ্চন যোগ (উপযুক্ত মিলন): যেমন বর তেমন কনে এ যেন মণিকাঞ্চন যোগ।
- মানিক জোড় (গভীর সম্পর্ক): সহকর্মীদের এমন মানিক জোড় খুব কমই দেখা যায়।
- লেফাফা দুরস্ত (বাইরে পরিপাটি): লোকটি লেফাফা দুরস্ত হলে কী হবে, আসলে মূর্খ।
- সপ্তমে চড়া (প্রচণ্ড উত্তেজনা): এসব দুর্নীতি দেখে তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল।
- সোনায় সোহাগা (উপযুক্ত মিলন): বর-কনেকে খুব সুন্দর মানিয়েছে, এ যেন সোনায় সোহাগা।
- হাতটান (চুরির অভ্যাস): লোকটির হাতটানের অভ্যাস আছে, সাবধানে থেকো।
- হাতেখড়ি (শিক্ষার শুরু): ওস্তাদ রবিউল ইসলামের কাছে তাঁর সংগীত চর্চার হাতেখড়ি হয়।
১০০ বাগধারা
- কাঁচা সোনা = নিখাদ স্বর্ণ।
- মনে ধরা = পছন্দ হওয়া।
- রাবণের চিতা =চির অশান্তি।
- বালির বাঁধ = অস্থায়ী বস্তু।
- গোবর গণেশ =মূর্খ।
- তামার বিষ = অর্থের কুপ্রভাব।
- গোঁফ খেজুরে = নিতান্ত অলস।
- একাদশে বৃহস্পতি = সৌভাগ্যের বিষয়।
- কেতাদুরস্ত = পরিপাটি।
- আক্কেল সেলামি =নির্বুদ্ধিতার দণ্ড।
- কুল কাঠের আগুন = তীব্র জ্বালা।
- আড়িপাতা = আড়াল থেকে শোনা।
- আমতা আমতা করা = ইতস্তত করা।
- অক্ষরে অক্ষরে = সম্পূর্ণভাবে।
- বক ধার্মিক =ভণ্ড সাধু।
- অক্কা পাওয়া = মারা যাওয়া।
- আকাশ কুসুম = অসম্ভব কল্পনা।
- অমাবস্যার চাঁদ = দুর্লভ বস্তু।
- ব্যাঙের সর্দি = অসম্ভব ঘটনা।
- পদ্মপাতায় জল = ক্ষণস্থায়ী।
- শাপে বর = অনিষ্টে ইষ্ট লাভ।
- হালে পানি পাওয়া = সুবিধা করা।
- বাঁ হাতের ব্যাপার = ঘুষ গ্রহণ।
- অহি-নকুল = ভীষণ শত্রুতা।
- আট কপালে = হতভাগ্য।
- উড়নচণ্ডী = অমিতব্যয়ী।
- চাঁদের হাট = আনন্দের প্রাচুর্য।
- নয়ছয় = অপচয়।
- শকুনি মামা =কুচক্রী লোক।
- হাত গুটান =কার্যে বিরতি।
- উত্তম-মধ্যম = প্রহার।
- গড্ডলিকাপ্রবাহ = অন্ধ অনুকরণ।
- সাক্ষী গোপাল = নিষ্ক্রিয় দর্শক।
- পালের গোদা = দলপতি।
- দুধের মাছি = সুসময়ের বন্ধু।
- একচোখা = পক্ষপাতদুষ্ট।
- কানকাটা = নির্লজ্জ।
- কংস মামা = নির্মম আত্মীয়।
- কাঁচা হাত = অপটু।
- খয়ের খাঁ = তোষামোদকারী।
- গুড়ে বালি = আশায় নিরাশ হওয়া।
- ঘুঘু চরানো = সর্বনাশ করা।
- ঘাটের মড়া = মৃত্যু আসন্ন যার।
- চুনোপুঁটি = সামান্য ব্যক্তি।
- জিলাপির প্যাঁচ = কূটবুদ্ধি।
- জগাখিচুড়ি = বিশৃঙ্খল।
- টনক নড়া = সচেতন হওয়া।
- টাকার কুমির = অনেক টাকার মালিক।
- ঠোঁটকাটা = বেহায়া।
- ডুমুরের ফুল = অদৃশ্য বস্তু।
- তাসের ঘর = ক্ষণস্থায়ী।
- পটল তোলা = মারা যাওয়া।
- পুকুর চুরি = বড় ধরনের চুরি।
- বসন্তের কোকিল = সুসময়ের বন্ধু।
- ভূশণ্ডি কাক = দীর্ঘকালের অভিজ্ঞ ব্যক্তি।
- ভিজা বিড়াল = সাধু বেশে অসৎ লোক।
- তুষের আগুন = দীর্ঘস্থায়ী ও দুঃসহ যন্ত্রণা।
- ঢাকের কাঠি = তোষামোদকারী।
- যক্ষের ধন = কৃপণের ধন।
- ষোলো কলা = সম্পূর্ণ।
- হাল ধরা = দায়িত্ব গ্রহণ।
- লেফাফা দুরস্ত = পরিপাটি।
- অগাধ জলের মাছ = খুব চালাক।
- এলাহি কাণ্ড = বিরাট আয়োজন।
- অরণ্যে রোদন = বৃথা আবেদন।
- অকালকুষ্মাণ্ড = অপদার্থ।
- অন্ধের যষ্টি = একমাত্র সম্বল।
- অর্ধচন্দ্র = গলাধাক্কা।
- আট কপালে = হতভাগ্য।
- উড়ো কথা = গুজব।
- কাঁঠালের আমসত্ত্ব = অসম্ভব বস্তু।
- কাঁচা-পয়সা = নগদ উপার্জন।
- কেউকেটা = সামান্য।
- চক্ষু চড়কগাছ = বিস্ময়।
- মাথাব্যথা = আগ্রহ।
- খণ্ড প্রলয় = ভীষণ ব্যাপার।
- গদাই লস্করী চাল = অতি ধীর গতি।
- অগ্নিশর্মা = অত্যন্ত রাগান্বিত হওয়া।
- আগুন নিয়ে খেলা = ভয়ংকর বিপদ।
- কৈ মাছের প্রাণ= যা সহজে মরে না।
- গোড়ায় গলদ= শুরুতে ভুল।
- গুড়ে বালি= আশায় নৈরাশ্য।
- চোখের পর্দা= লজ্জা।
- ননীর পুতুল= শ্রমবিমুখ।
- নেই আঁকড়া= একগুঁয়ে।
- দহরম মহরম= ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
- পুকুর চুরি= বড় রকমের চুরি।
- মণিকাঞ্চন যোগ= উপযুক্ত মিলন।
- মিছরির ছুরি= মুখে মধু অন্তরে বিষ।
- হাটে হাঁড়ি ভাঙা= গোপন কথা প্রকাশ করা।
- শাঁখের করাত= উভয় সংকট।
- গলগ্রহ= পরের বোঝা হয়ে থাকা।
- গোঁয়ার গোবিন্দ= নির্বোধ অথচ হঠকারী।
- ছিনিমিনি খেলা= নষ্ট করা।
- কলুর বলদ= পরিশ্রম করে কিন্তু ফল পায় না।
- উনপাঁজুরে= দুর্বল।
- উনিশ-বিশ= সামান্য পার্থক্য।
- গা ঢাকা দেওয়া= নিজেকে লুকিয়ে রাখা।
- পগার পার= পলায়ন করা।
- রুই-কাতলা= বড় বড় লোক।
FAQ Section
প্রশ্ন: বাগধারা কাকে বলে?
উত্তর: বাগধারা হলো কিছু স্থায়ী শব্দগুচ্ছ, যা আক্ষরিক অর্থে নয়, বরং রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: বাগধারার উদাহরণ দিন।
উত্তর: “ঘোড়ার ডিম” – যার অর্থ বাজে বা মূল্যহীন কিছু।
প্রশ্ন: কিভাবে বাগধারা মুখস্থ করা যায়?
উত্তর: উদাহরণসহ পড়লে এবং ব্যবহার করে লিখলে সহজে মুখস্থ হয়।
প্রশ্ন: বাগধারা কোথায় কাজে লাগে?
উত্তর: সাহিত্য চর্চা, ভাষার সৌন্দর্য বাড়ানো, ও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে।
উপসংহার
বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও গভীরতা বোঝার জন্য বাগধারার জ্ঞান অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার জ্ঞানে দৃঢ়তা আনতে এবং সৃজনশীল লেখায় রূপকতার ছোঁয়া যোগ করতে বাগধারাগুলো অসাধারণ ভূমিকা রাখে। উপরের ১০০টি বাগধারা শিখে আপনি নিজেও আপনার ভাষা চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবেন।