জানাজা নামাজ

জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম

জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম। কোনো মুসলমান ব্যক্তি মারা গেলে, তার লাশ দাফন করার পূর্বে চার তাকবীরের সাথে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়।

জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম।ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোনো মুসলমান ব্যক্তি মারা গেলে, তার লাশ দাফন করার পূর্বে চার তাকবীরের সাথে জানাজার নামাজ আদায় করা হয়। জানাযার নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া। সালাত আল-জানাজা হচ্ছে ইসলামী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি অংশ। নামাজে জানাযার মাধ্যমে মৃত এবং সমস্ত মৃত মুসলমানদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য দোয়া করা হয়।

মুসলমানদের জন্য সালাত আল-জানাযা আদায় করা একটি ফরজে কিফায়া (সম্মিলিত বাধ্যবাধকতা) ইবাদত। অর্থাৎ, সমাজের কিছু সংখ্যক মুসলমান যদি কারো জানাযায় শরীক হয়, তাহলে সমাজের অন্যান্য সবার বাধ্যবাধকতা পূর্ণ হয়। কিন্তু কেউই যদি তা আদায় না করে থাকে, তবে সমাজের সকল মুসলমানদের গোনাহ হয় এবং জবাবদিহি করতে হবে।

আলোচ্যসূচি

জানাযা নামাজ পড়ার নিয়ম

জানাযার নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া। চার তাকবীরের সাথে জানাজার নামাজ আদায় করতে হয়। জানাযার নিয়ত করে প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত দু’হাত তুলে হাত বেঁঁধে ছানা পাঠ করতে হয়, (প্রথম তাকবির ব্যতীত হাত না ওঠানো।) এরপরের তাকবীর গুলোতে আর হাত ওঠানোর প্রয়োজন পড়ে না।

  • প্রথম তাকবিরের পর ছানা পাঠ।
  • দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পাঠ।
  • তৃতীয় তাকবিরের পর জানাজার দোয়া পাঠ।
  • চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফেরানো।

জানাযা নামাজের কাতার তিন, পাঁচ, সাত এভাবে বেজোড় হওয়া জরুরী নয়, তবে জানাজার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা কম হলে তাদের তিন সারিতে দাঁড় করানো উত্তম।


জানাজার নামাজের দোয়া

জানাজা নামাজের নিয়ত

মাইয়্যিত পুরুষ না-কি মহিলা তা ইমাম সাহেব জানিয়ে দিবেন। সে অনুযায়ী নিয়ত করার সময় আপনি মৃত ব্যক্তির জন্য(পুরুষ/মহিলা) দোয়া উল্লেখ করে নিবেন। আপনার মনে যেভাবে নিয়ত আসে আপনি সেভাবেই নিয়ত করতে পারবেন। যেমন:

আমি ক্বিবলামুখী হয়ে জানাযা আদায়ের জন্য চার তাকবিরের সাথে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মৃত ব্যক্তির (পুরুষ বা মহিলা) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লহু আকবার।

জানাযার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরী নয়। কিংবা শুধুমাত্র আরবীতেই নিয়ত করতে হবে এমন কোনো কথা নাই। জানাজার নামাজের নিয়ত মনে মনে করলেই হবে। কারণ নিয়ত বলা হয় মূলত মনের ইচ্ছাকে। আর জানাজার নামাজ পড়ার জন্য কেউ দাঁড়ালে বুঝা যায় অবশ্যই তার মনের ইচ্ছা রয়েছে।

প্রথম তাকবিরের পর ছানা পাঠ

প্রথম তাকবীরের সময়, আল্লহু আকবার বলে, কান পর্যন্ত দু’হাত তুলে হাত বেঁঁধে ছানা পাঠ করতে হয়, জানাজার ছানা আর নামাজের ছানার মাঝে একটি শব্দের পার্থক্য রয়েছে। সেটি হচ্ছে, ‘ওয়াজাল্লাছানা-উকা।’

আরবিতে জানাযা ছানা

سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

জানাযা ছানা বাংলা উচ্চারণ

সুবহানাকাল্লহুম্মা ওয়াবিহা’মদিকা, ওয়াতাবা-রকাসমুকা, ওয়াতাআ’লা জাদ্দুকা, ওয়াজাল্লাছানা-উকা, ওয়ালা ইলাহা গয়রুক।

দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পাঠ

জানাযা নামাজের ছানা পড়ার পর, দ্বিতীয় তাকবীরে আল্লহু আকবার বলে দরুদ শরীফ(দরুদে ইবরাহীম) পড়তে হয়।

দরুদ শরীফ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা সল্লিআ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ,
কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরহিমা ওয়া-আ’লা আলি ইবরহিমা, ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহাম্মাদ,
কামা বারকতা আলা ইবরহিমা ওয়া-আ’লা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।

দুরুদ শরীফ বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের ওপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত।

তৃতীয় তাকবিরের পর জানাজার দোয়া পাঠ

জানাজার তৃতীয় তাকবিরের দোয়া: দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাযার দোয়া পড়তে হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ও বালিকার জানাযার দোয়া ভিন্ন।

প্রাপ্ত বয়স্ক মাইয়াতের জানাজার দোয়া

মাইয়াত (মৃত ব্যক্তি) যদি বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) পুরুষ বা মহিলা হয় তবে এই দোয়া পড়া হয়—

اللهُـمِّ اغْفِـرْ لِحَيِّـنا وَمَيِّتِـنا وَشـاهِدِنا ، وَغائِبِـنا ، وَصَغيـرِنا وَكَبيـرِنا ، وَذَكَـرِنا وَأُنْثـانا . اللهُـمِّ مَنْ أَحْيَيْـتَهُ مِنّا فَأَحْيِـهِ عَلى الإِسْلام ،وَمَنْ تَوَفَّـيْتََهُ مِنّا فَتَوَفَّـهُ عَلى الإِيـمان ، اللهُـمِّ لا تَحْـرِمْنـا أَجْـرَه ، وَلا تُضِـلَّنا بَعْـدَهُ

জানাজার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়িনা ওয়া মাইয়িতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকিরিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আ’লাল ইসলাম। ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আ’লাল ঈমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহ ওয়া লা তুদিল্লানা বাআ’দা।

জানাজার দোয়া বাংলা অর্থ

“হে আল্লাহ্‌! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপসি’ত, ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্‌! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।”

আমাদের দেশে অনেকেই জানাযার দোয়ার শেষোক্ত, আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহ ওয়া লা তুদিল্লানা বাআ’দা। — এই লাইনটুকু পড়িনা। আপনি চাইলে পড়তে পারেন।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ও বালিকার জানাযার দোয়া

নাবালিক ছেলে শিশুর জানাযার দোয়া পড়া

اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।

হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।’

নাবালিকা মেয়ে শিশুর জানাযার দোয়া

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।

হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।’

এখানে, একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন। নাবালিক ছেলের ক্ষেত্রে ওয়াজআলহু এবং নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে ওয়াজআলহা উচ্চারণ করতে হবে।

চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফেরানো

জানাযার দুআ পাঠের পর ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলে প্রথমে ডানে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি’ বলে সালাম ফিরাবে। মুক্তাদীরাও তার অনুকরণ করে জানাযা সম্পন্ন করবে।


জানাযার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত

জানাযা নামাজের ফরজ সমূহ

  • চারবার তাকবির দিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। প্রতি তাকবির এক রাকাআতের স্থলাভিষিক্ত। জানাযার নামাজে রুকু, সিজদা নেই।
  • দাঁড়ানো। অর্থাৎ, দাঁড়িয়ে জানাযা আদায় করা। বিশেষ কারণ ব্যতিত জানাযার নামাজ বসে আদায় করা বৈধ নয়। কোনো কিছু উপর ওঠে নামাজ পড়াও বৈধ নয়। জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।

জানাযার নামাজের সুন্নাত সমূহ

  • মহান আল্লাহ তাআ’লার শানে হামদ ও সানা পড়া।
  • রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া।
  • মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনার জন্য দোয়া করা।

জানাজা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাবলী

মৃত নবজাতকের জানাযা বিধান

মৃত ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর জানাযা ও কাফন | মৃত ভূমিষ্ট নবজাতক শিশুর জানাযা পড়ার নিয়ম নেই। মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হলে, শিশুর সুন্দর একটি ইসলামিক নাম রেখে গোসল দিয়ে একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দেওয়া। অতএব, উক্ত বাচ্চার জানাযা ও কাফন দিতে হবে না ৷ একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দেওয়াই উত্তম৷

জানাজা পড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য যিনি

মাইয়েত কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অছিয়ত করে গেলে তিনিই জানাযা পড়াবেন। নইলে ‘আমীর’ বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মাইয়েতের কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাক্বী আলেম জানাযায় ইমামতি করবেন। মৃত ব্যক্তি দু’জন ব্যক্তির নামেও অছিয়ত করে যেতে পারেন।

মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযে মৃতের ওলি এবং মহল্লার ইমাম উভয়ে যদি উপস্থিত থাকেন এবং ইমাম ইলম-আমলে মৃতের ওলিদের থেকে বেশি যোগ্য হন তাহলে ইমামই জানাযা পড়ানোর বেশি হকদার।

প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

يُصَلِّي عَلَيْهَا أَئِمَّةُ الْمَسَاجِدِ.

জানাযার নামায পড়াবে মসজিদের ইমামগণ। তিনি আরো বলেন,

تَرْضَوْنَ بِهِمْ فِي صَلَاتِكُمُ الْمَكْتُوبَاتِ، وَلَا تَرْضَوْنَ بِهِمْ عَلَى الْمَوْتَى.

তোমরা তাদের পেছনে ফরয নামায পড়তে রাজি। কিন্তু জানাযা পড়তে রাজি না (এটা কেমন কথা)! -কিতাবুল আসার, হাদীস ২৩৭

জানাযার সালাতে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান

আবূ গালিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে এক ব্যক্তির জানাযার সালাত পড়তে দেখলাম। তিনি তার মাথা বরাবর দাঁড়ান। আরেকটি মহিলার লাশ উপস্থিত করা হলে লোকেরা বললো, হে আবূ হামযা! তার জানাযার সালাত পড়ুন। তিনি খাটের মাঝ বরাবর দাঁড়ান। আল ইবনু যিয়াদ (রহ.) তাকে বলেন, হে আবূ হামযা! আপনি পুরুষের জানাযায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, মহিলার জানাযায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কেও সেভাবে দাঁড়াতে দেখেছেন কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি আমাদের দিকে ফিরে বলেনঃ তোমরা স্মরণ রেখো।” (তিরমিযী ১০৩৪, আবূ দাউদ ৩১৯৪ মিশকাত ১৬৭৯। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)

জানাজায় রুকু-সিজদা নেই কেনো?

জানাজার নামাজে রুকু ও সিজদা না থাকার দুইটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো —

জানাজার নামাজ পড়া হয় লাশ সামনে রেখে। যদি অন্য নামাজের মতো জানাজার নামাজে রুকু-সিজদা করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা হতে পারে যে লাশের উদ্দেশে বুঝি রুকু-সিজদা করা বৈধ। সুতরাং লাশ সামনে রেখে রুকু-সিজদা করলে শিরকের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই মুসলিম উম্মাহকে শিরকি ধারণা থেকে বাঁচানোর জন্য জানাজার নামাজে রুকু-সিজদার বিধান দেওয়া হয়নি।

রুকু ও সিজদায় নিজের সর্বনিম্ন অক্ষমতা ও অপদস্থতা এবং আল্লাহ তাআলার সীমাহীন মর্যাদা, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ করা হয়। জানাজার নামাজে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, গুণাগুণ এবং অন্যদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
কারণ, জানাজার নামাজ মৃত ব্যক্তির পক্ষে শুধুই সুপারিশ। আর রুকু-সিজদার কারণ ও উদ্দেশ্য এর বিপরীত। তাই জানাজার নামাজে রুকু-সিজদার বিধান দেয়া হয়নি।

জানাজার নামাজ পড়া হয় লাশ সামনে রেখে। যদি অন্য নামাজের মতো জানাজার নামাজে রুকু-সিজদা করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা হতে পারে যে, লাশের উদ্দেশে বুঝি রুকু-সিজদা করা বৈধ।
সুতরাং লাশ সামনে রেখে রুকু-সিজদা করলে শিরকের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই মুসলিম উম্মাহকে শিরকি ধারণা থেকে বাঁচানোর জন্য এ বিধান দেয়া হয়নি।


জানাযা নামাজের ফজিলত ও উপকারিতা

জানাযার নামাযে শরীক হওয়ার উপকারিতা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং নেকী লাভের আশায় জানাযার অনুগমন করে তার নামায ও দাফন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, সে ব্যক্তি দুই ক্বীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরে আসে। প্রত্যেক ক্বীরাত উহুদ পাহাড় সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি তার নামায পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, সে ব্যক্তি এক ক্বীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরে আসে।” (বুখারী ৪৭, হাদীস সম্ভার, ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী।)

উহুদ পর্বত সৌদি আরবের মদিনা শহরের উত্তরে অবস্থিত। উহুদ পাহাড়ের উচ্চতা ১,০৭৭ মিটার (প্রায় ৩,৫৩৩ ফুট)। মক্কার কুরাইশ ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যকার উহুদের যুদ্ধ এই পর্বত সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়েছিল।

জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নেয়ার সাওয়াব

হাদীসে পাকে রয়েছে: “যে ব্যক্তি জানাযাকে নিয়ে চল্লিশ কদম চলবে তার চল্লিশটি কবীরা গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” হাদীস  শরীফে এটাও রয়েছে:  “যে ব্যক্তি জানাযার চারটি পায়াকে কাঁধে নিবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে পরিপূর্ণ (স্থায়ী) ক্ষমা করে দিবেন।”

(আল জাওহারাতুন নায়্যারাহ্, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা। দুররে মুখাতার, ৩য় খন্ড, ১৫৮-১৫৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত হাদিসটি জাল কি সঠিক তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। আপনি এ বিষয়ে এখানে দেখতে পারেন, চারদিক থেকে দশ পা করে জানাযা বহন।

জানাযা নামাজ আদায় ও দাফনে অংশগ্রহণ ব্যাপক সাওয়াব ও কল্যাণের কাজ-
  • জানাযায় অংশগ্রহণে সুন্নাতের অনুসরণে বান্দার একটি হক আদায় হয়।
  • জানাযা আদায় করলে ১ ক্বীরাত সাওয়াব পাওয়া যায়।
  • কেউ দাফনের উদ্দেশ্যে মৃতব্যক্তির খাঁঁটিয়া কাঁঁধে নিয়ে ৪০ কদম হাঁঁটলে ৪০টি কবীরা গোনাহ মাফ করা হয়।
  • জানাযা নামাজ আদায় ও দাফন করলে মোট ২ ক্বীরাত নেকী পাওয়া যায়।

জানাযায় অংশগ্রহণ অনেক সাওয়াবের কাজ। প্রত্যেক মুসলমান বান্দার উচিত, কেউ মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে জানাযায় অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এখানে সংকলিত সকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। যেহেতু এটি একটি ধর্মীয় আর্টিকেল, তাই আপনার কোনো বিষয়ে আশঙ্কা থাকলে, আপনি একজন দ্বীনি আলেমের কাছ থেকে জানাজার নামাজের সঠিক মাসআলা জেনে নেবেন।


Reference:
Photography by: Ikhlas Al Fahim (Salatul Janaza of Ahmad Shafi)
Hadith from: https://www.hadithbd.com/

কিউএনএবাংলা.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় শিক্ষা, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, সরকারি সেবা, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন qnabangla.com@gmail.com ঠিকানায়।
নিয়মিত আমাদের আপডেট পেতে গুগল নিউজ ফিডটি অনুসরণ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.