Uncategorized

ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম কানুন (করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সমূহ)

আপনি কি ফ্ল্যাট কিনতে চলছেন? ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করা উচিৎ। কিন্তু ফ্ল্যাট কেনার আগে, আপনি কি নিশ্চিত যে এটি ঝামেলা মুক্ত? আপনি বিভিন্ন আবাসন নির্মাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অফারের ফাঁদে পড়তে পারেন এবং অসাবধানতার কারণে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন সীমান্তে।

তাই, ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনাকে কিছু করনীয় বর্জনীয় যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। সেটা ঢাকায় হোক বা বাংলাদেশের যে প্রান্তেই হোক না কেন।

পড়ুন: ফ্ল্যাট ক্রয় নাকি জমি ক্রয়?

ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম কানুন (করণীয় বিষয় সমূহ)

ফ্ল্যাট কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। প্রথমেই জেনে নিন করনীয় বিষয়গুলো:

অবস্থান কোথায়?

প্রথমেই মনে রাখতে হবে পছন্দের স্থান। আপনি যে এলাকা থেকে ফ্ল্যাট কিনতে চান সেখান থেকে আপনার অফিস বা ব্যবসার দূরত্ব পরীক্ষা করুন। এছাড়াও, পরিবহন ও যোগাযোগ সুবিধা, নাগরিক সুবিধা রয়েছে কিনা তাও দেখে নেওয়া উচিত।

নিরাপত্তা কেমন?

আপনি যে জায়গায় ফ্ল্যাট নিতে যাচ্ছেন সেখানকার নিরাপত্তার ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে। চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দূষণও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এবং বাজেটের কথা মাথায় রেখে জায়গাটি বেছে নিন।

ফ্ল্যাটের আকার ও আয়তন?

পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আসবাবপত্রের লেআউট এবং রুচি বুঝে ফ্ল্যাট সাইজ বেছে নেওয়া উচিত। আপনি কত তলা কিনতে যাচ্ছেন তাও মনে রাখতে হবে।

যদি আপনার পছন্দের ফ্ল্যাট উপরের তলায় থাকে, তাহলে আপনি গ্রীষ্মের গরমে ভুগতে পারেন। যাইহোক, অনুমতি সাপেক্ষে, আপনি সুন্দরভাবে ছাদ সাজাতে পারেন এবং এটি ব্যবহার করতে পারেন।

আপনি যদি দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট পছন্দ করেন, তাহলে ভবনটির নিরাপত্তার দিকে ভালোভাবে নজর দিন। প্রতিটি তলায় ফ্ল্যাটের সংখ্যাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। যদি প্রতিটি তলায় একটি ফ্ল্যাট থাকে, তাহলে সিঁড়ি এবং লবির অংশটিকে নিজের মতো করে সাজানো সম্ভব।

ভবনের সুযোগ সুবিধা

আজকের অ্যাপার্টমেন্ট বা কনডমিনিয়ামে আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুল, কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের খেলার মাঠ, পার্কিং , গেস্ট-পার্কিং, মাল্টি লেভেল সিকিউরিটি সিস্টেম, জরুরী ড্রেনেজ সিস্টেম, চব্বিশ ঘন্টা বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির সংযোগ।

ভবনের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং এটি যে দিকে মুখ করে তা বিবেচনা করুন। বাংলাদেশে দক্ষিণমুখী ফ্ল্যাটের চাহিদা সবসময়ই একটু বেশি।

মালিকানার ধরণ

যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি ফ্ল্যাটটি কিনতে যাচ্ছেন না কেন, আপনাকে প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য, যে জমিতে প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি রয়েছে তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রেতার নাম উল্লেখ আছে কি না এবং সিএস, আরএস সহ অন্যান্য লেজারের আদেশ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

এবং আপনাকে জানতে হবে যে রিয়েল এস্টেট কোম্পানির যথাযথ নিবন্ধন আছে কি না এবং এটি রিহ্যাবের সদস্য কিনা। যদি ডেভেলপার কোম্পানি কোন মালিকের কাছ থেকে জমি নিয়ে থাকে, তাহলে এই বিষয়ে কোন চুক্তি আছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার সুবিধা এবং অসুবিধা সমূহ

নামজারি বা মিউটেশন অবস্থা

জমির নামকরণ সঠিক কিনা তা যাচাই করতে হবে। যদি বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হন, তবে এটি একটি বিতরণ মামলা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

মামলা আছে কিনা

ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের ক্ষেত্রে জমির হালনাগাদ খেয়াল রাখতে হবে। ভূমি কর না দেওয়ার কারণে কোন সার্টিফিকেট কেস আছে কিনা তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। জমিতে অন্য কোনো মামলা আছে কিনা তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

নকশার সাথে মিল আছে কি না

বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি প্রকৃত অবস্থার সাথে ঘটনাস্থলের নকশার সাথে মেলে। প্রয়োজনে আশেপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ-খতিয়ান জানা প্রয়োজন।

চুক্তির একটি অনুলিপি আইনি উপায়ে রাখতে ভুলবেন না, সমস্ত শর্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে।

রাজউকের অনুমোদন আছে কিনা

সমতল ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট সনদ। বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কি না এবং আছে কিনা, বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক নাকি আবাসিক কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন।

আপনি যদি গ্যাস সংযোগ পেতে চান, তাহলে দেখতে হবে এটি আইনত নেওয়া হয়েছে কিনা। যদিও বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাটে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

খাসজমির খবরাখবর

এটি নিশ্চিত করতে হবে যে প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরকারের খাস জমিতে আছে নাকি; সরকারের কোন স্বার্থ আছে। এটাও দেখা উচিত যে জমি অর্পিত সম্পত্তি বা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কিনা। জমি আগে যে কোন সময়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছে বা প্রক্রিয়াধীন আছে কিনা, তা ওয়াকফ, দেবোত্তর জমি কিনা তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি যাচাই জমির মালিক কোন অ্যাটর্নি বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছেন কিনা তা খুঁজে বের করুন। এটি সঠিক কিনা তা অ্যাটর্নিকে দেখতে হবে। যদি বিক্রেতা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, তাহলে তার বৈধতা যাচাই করা প্রয়োজন। প্রকৃত মালিক সঠিক কিনা এবং অ্যাটর্নি সঠিক কিনা তা দেখার জন্য প্রকৃত মালিকের সাথে যোগাযোগ করুন।

কিস্তি সম্পর্কে জানা

যদি এটি কিস্তিতে কেনা হয়, চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে কতটি কিস্তি এবং কখন স্থানান্তর হবে। যদি এটি কোন কারণে ক্রয় করা না যায়, তাহলে এটি কিভাবে নিষ্পত্তি করা হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

আরও যে সব বিষয়ে জানতে হবে

  • আপনি যে এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চান সেই এলাকার বাজার মূল্য দেখুন।
  • আপনি যদি ফ্ল্যাটটি পুনরায় বিক্রয় করতে চান, সেই অনুযায়ী স্থান নির্বাচন করুন এবং ফ্ল্যাটের যত্ন নিন।
  • পুরনো ফ্ল্যাট কেনার সময় অন্যান্য ফ্ল্যাট মালিক এবং ভবনের অধিবাসীদের সম্পর্কে জানুন।
  • ফ্ল্যাট ক্রয় চুক্তি একাধিকবার পড়ুন।
  • ফ্ল্যাটটি ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য বন্ধক আছে কিনা তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • খাজনা না দেওয়ার জন্য জমি কখনও নিলাম হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে।

আরও পড়ুন: ফ্ল্যাট কেনার আগে যা যাচাই করতে হবে

ফ্ল্যাট কেনার নিয়ম কানুন – বর্জনীয় বিষয়সমূহ

  • আইন-কানুন না বুঝা,
  • তাড়াহুড়া করা,
  • জমির হালনাগাদ অবস্থা না জানা,
  • একদেশদর্শীতা,
  • অপরিণামদর্শীতা,
  • পরামর্শ গ্রহণে অনীহা,
  • সিদ্বান্তহীনতায় ভোগা, ইত্যাদি।

ফ্ল্যাট কেনার আগের অবশ্যই কিছু বিষয় যাচাই করে কেনা উচিত। কেননা, সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনবেন। নিজের একটি ফ্ল্যাটের স্বপ্ন পূরণ করবেন। তাই কেনার আগে একটু ভালোভাবে দেখেশুনে কিনলে পরে পস্তাতে হবে না।

পরে কষ্ট করার চাইতে, আগে কষ্ট করা ভালো। তেমনি আগে কষ্ট করে ফ্ল্যাট সম্পর্কে সব তথ্য যাচাই করে, সব কিছু জেনেশুনে ফ্ল্যাট কিনলে পরে আর কষ্ট করতে হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Index

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.