Lifestyle

দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায়

চলুন জেনে নেই, দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায়। দাঁতে কালচে বা লালচে ছোপ নানা কারণে হয়ে থাকে, বিশেষ করে মশলা জাতীয় খাবার, পান-বিড়ি, ধূমপান, মদ্যপান, বা তামাক জাতীয় পদার্থ ও আয়রন যুক্ত পানি পানের কারণে দাঁতের কালো দাগ হতে পারে।

আরো কিছু বদ অভ্যাসের কারণে দাঁতে দাগ পড়ে যায়। বিভিন্ন উপায়ে দাঁতের কালো বা হলুদ দাগ পরিষ্কার করা যায়। যতোই সুন্দর মুখশ্রীর অধিকারী হোন না কেন দাঁতগুলো হলুদ হলে সব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যাবে, অন্যের বিরক্তি যোগাবে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরী। আপনি ঘরে বসেই কিছু টিপস মেনে চললে হলুদ দাঁতজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। 

ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্যরে ক্ষতির পাশাপাশি দাঁত হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে যায়। তাই, প্রথমেই আপনাকে এই বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত কফি পান এবং তামাক পাতা গ্রহণের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

জাংক ফুড পরিহার
জাংক ফুড খাওয়ার পরিবর্তে প্র্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় আপেল, গাজর, জাম ও বেদনা জাতীয় ফল যুক্ত করুন।

দুগ্ধজাত খাবার 
নিয়মিত দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, দধি খেলে মিনারেল ও অ্যানামেলের প্রভাবে দাঁত থাকবে সুন্দর, হলুদ দাগ বা বিবর্ণতার সম্ভাবনা কমে যাবে।আর আপনার হাসিতে মুক্তো ঝরবে, সন্দেহ নেই।

ইলেকট্রিক টুথব্র্যাশ
ভালো মানের টুথপেষ্টের সঙ্গে ইলেকট্রিক টুথব্র্যাশ ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে, হলুদ দাগ ও ক্ষতিকর ‘প্লাক’-র হাত থেকে মুক্ত থাকবেন। মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। খাবার গ্রহণের পরপরই ভুলেও দেরী না করে ব্রাশ করে ফেলুন। কেননা, খাবার গ্রহণের সাথে সাথেই মুখগহবরে যে এসিড ও সুগার নি:সৃত হয় তা দাঁতের অ্যানামেলকে দূর্বল করে ফেলে। দাঁত ব্রাশের পরে খুব ভালোভাবে কুলকুচি করতে ভুলবেন না যেন।

নারিকেল তেলে কুলকুচি
নারিকেল তেল বা চায়ের নির্যাস দিয়ে কুলকুচি করলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন। কেননা, এসব উপাদান আপনার দাঁতকে ‘টারটার’ ও প্লাক পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। ‘টারটার’ ও প্লাকের কারণে দাঁত বিবর্ণ হয়ে যায়। ওই তেল ২ চা-চামচ পরিমাণ মুখে নিয়ে অন্তত ৫ মিনিট কুলকুচি করুন। আর কুলকুচির পর আধাঘন্টা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিন ২ বার এই প্রক্রিয়া মেনে চলুন।

তুলসি পাতা
তুলসি পাতার ব্যবহারে দারুন ফল পাবেন। ১৫-২০ টি পরিষ্কার তুলশি পাতা দিয়ে টুথপেষ্ট বানিয়ে নিন, নিয়মিত ব্রাশ করুন, দাঁত হবে ঝকঝকে-দাগহীন।

কাঠকয়লার গুঁড়া
কাঠকয়লার গুঁড়া ব্রাশে লাগিয়ে প্রতিদিন ২-৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলদায়ক হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতের ওপর একটু ভালোভাবে ব্রাশ করতে হবে।

দাঁতের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

যতই সাজ গোজ করুন না কেনো দাঁতে কালচে, লালচে বা হলুদ ছোপ থাকলে দেখতে ভালো লাগবে না। অতিরিক্তঁ চা পান, বিড়ি-সিগারেট বা পান-মশলা জাতীয় কিছু খাওয়ার অভ্যাস থাকলে দাঁতে এই ধরণের দাগ দেখা দেয়। তাই আগে এগুলো ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। তারপর, ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের দাগ পরিষ্কারের টোটকাগুলো অনুসরণ করুন।

  • লবণ : এক চিমটি লবণ লেবুর খোসায় নিয়ে দাঁত ঘষে দাঁতের দাগ দূর হতে পারে।
  • বেকিং পাউডার : এক চা চামচ পরিমাণ বেকিং সোডা একটি পাতিলেবুর অর্ধেকটার রস মিশিয়ে উষ্ণ পানি ও তরল দাঁতের ওপর লাগান। এর তিন মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন, তাতে দূর হবে দাগ।
  • গাজর : গাজরের ফাইবার দাঁত পরিষ্কারে সাহায্য করতে পারে।
  • কলার খোসা : কলার খোসার সাদা দিকটি নিয়মিত দাঁতে ঘষলে দাঁতের হলদে ভাব দ্রুত কেটে যায়।পরে কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে ফেলা যায়।
  • তুলসী পাতা : দাঁতের স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারী তুলসী পাতা। বেশি করে তুলসী পাতা নিয়ে সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। পাতা শুকানোর পর সেগুলোকে গুঁড়া করে টুথপেস্ট নিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে দাগ চলে যায়।
  • লবণ-তেল : সপ্তাহে একবার সরিষার তেলের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে দাঁত ব্রাশ করলেও দাগ চলে যায়।

এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে দাঁতের কালো দাগ দূর করা যেতে পারে। যেমন:

  • ধূমপানের কারণে দাগ পড়লে বারবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
  • দিনে একবার মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে দাগ হালকা হবে।
  • তেজপাতার পাউডারের কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দাঁত মাজুন, তাতে দাঁতের কালো দাগ চলে যাবে।
  • বিট লবণে সরিষার তেল মিশিয়ে দাঁতে মাজুন। দাঁত পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  • পান পাতা সরিষার তেলে ভিজিয়ে গরম করে দাঁতে ঘষলে দাঁত পরিষ্কার হতে পারে।
  • হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানিতে মিশিয়ে কুলকুচা করলে দাঁত পরিষ্কার হতে পারে।

এভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের কালো দাগ পরিষ্কার করা যায়। এ ছাড়া ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে স্কেলিং ও পলিশিং করিয়ে নিলে দাঁত পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই অন্তত ছয় মাস পর পর ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। তবে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য বাজারে চটকদার প্রচারিত কোনো সলিউশন কখনো ব্যবহার করবেন না। তাতে দাঁতের ক্ষতি হয় এবং দাঁতে আরো দ্রুত কালো দাগ পড়ে যায়।

দাঁতে কেনো দাগ হয়?

দাঁতের এত যত্ন নিই, তবু কেন এতে কালো দাগ পড়ে? এ প্রশ্ন অনেকেরই। দাঁতে কালো দাগের প্রধানতম কারণ দন্তমল বা ডেন্টাল প্ল্যাক। আমরা যা খাই, তার কিছু কণা দাঁতের ফাঁকে বা ওপরে জমে থাকে; পরে এগুলো শক্ত আবরণে পরিণত হয়। একে বলে দন্তমল। এই জমে থাকা খাদ্যকণা, ময়লা ইত্যাদি দাঁতের ওপর ও ফাঁকে কালো দাগ তৈরি করে। এ ছাড়া পান, সুপারি, জর্দা, তামাক বা ধূমপান দাঁতে কালো দাগ তৈরির জন্য দায়ী।

দন্তমলের কারণে হয় মাড়ির প্রদাহ ও সংক্রমণ। দন্তক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে, মুখে দুর্গন্ধ হয়। তাই নিয়মিত স্কেলিংয়ের মাধ্যমে দন্তমল দূর করা উচিত। আবার দাঁতে ফাঁক বা ক্ষয় থাকলে ময়লা বা খাদ্যকণা জমে বেশি। তাই ফাঁক পূরণে ডেন্টাল ফিলিং করে নেওয়া উচিত।

পরামর্শ

দাঁতে কালো দাগ যাতে না হয় এবং দন্তমল প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ রয়েছে। প্রতিদিন দিনে দুবার নাশতার পর ও নৈশভোজের পর ভালো করে দাঁত ব্রাশ করুন। দাঁত ব্রাশের আগে ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা ও ময়লা বের করে নিন। উন্নত মানের মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করা ভালো। প্রতিদিন কিছু শক্ত ফল, যেমন: আপেল, আমলকী, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি চিবিয়ে খান। কিছু শাকসবজি, যেমন: শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি নিয়মিত খান। ধূমপান বাদ দিন, পান, জর্দা, গুল ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।

সোর্স: Kaler Kontho, Nexus Televishon, Prothom Alo.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Index

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker on our website.